কলেজের জমিতে আ.লীগের কার্যালয়!

কলেজের জমিতে আ.লীগের কার্যালয়
কলেজের জমিতে আ.লীগের কার্যালয়

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা ডিগ্রি কলেজের জমিতে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণ করছেন নেতারা। পাশে আরেকটি আধা পাকা ভবন নির্মাণ করে ইতিমধ্যে তা দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের তিস্তা বাসস্ট্যান্ড ও বাজারসংলগ্ন এলাকার তিস্তা ডিগ্রি কলেজ চত্বরের জমিতে মারবেল পাথরে বড় আকারের একটি নামফলক লাগানো হয়েছে। তাতে উদ্বোধক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। ওই স্থানে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গোকুন্ডা ইউনিয়ন শাখা’ নামে দলীয় কার্যালয়ের রঙিন সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। পাশে আধাপাকা একটি ভবন নির্মাণ করে তা কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা দাবি করছেন, ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাট জেলা সফরকালে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দলীয় কার্যালয়টি উদ্বোধন করেছেন। তবে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট সফরের কার্যতালিকায় গোকুন্ডা ইউনিয়ন কার্যালয় উদ্বোধনের নাম নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কেউ এমন দাবি করে থাকলে তা পুরোপুরি মিথ্যাচার।কয়েকজন এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, তিস্তা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ অনেকেই আওয়ামী লীগের সমর্থক। তাই তাঁরা এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি।শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন কলেজ চত্বরের জমিতে এ অবৈধ স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ বা নির্মিত কার্যালয়টির উচ্ছেদ চাইলেও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের ভয়ে প্রতিবাদ করছেন না।গোকুন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, কলেজের খেলার মাঠের লাগোয়া ১০ শতক জমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থক জামিল হোসেন দলীয় কার্যালয় নির্মাণের জন্য দান করেছেন। ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাট জেলার কালেক্টরেট মাঠ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কার্যালয়টির উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন।ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, দলীয় প্রয়োজনে দলীয় সমর্থকের দেওয়া জমিতে দলের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানটি কলেজ চত্বরসংলগ্ন বলেই কলেজের জমি বলে দাবি করা হচ্ছে।এ ব্যাপারে জামিল হোসেন বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ওই জমি দলকে কার্যালয় করতে দিয়েছি।’ কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবু সালেহ মো. আবু সাঈদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ওই কার্যালয় উদ্বোধন করেননি। কার্যালয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ইজারা নেওয়া জমি ও কলেজের ক্রয়কৃত জমিতে নির্মিত হয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ আবদুস সালাম বলেন, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের তিন একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ও বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকার সওজ থেকে ইজারা নেওয়া জমির পরিমাণ ৭০ শতক। কলেজের নামে ক্রয়কৃত ও ইজারা নেওয়া জমির ৭ শতক জমিসহ মোট ১০-১২ শতক জমির ওপর কার্যালয়টি নির্মাণ করা হয়েছে। আরও একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। বিষয়টি কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং সওজ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।

লালমনিরহাট সওজ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, সওজের ইজারা নেওয়া জমিতে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের বিষয়টি তিনি জেনেছেন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।