দুর্গম পাহাড়ে শিক্ষার আলো

রাঙামাটির বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়হরিণামুখ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নিহারিকা চাকমা ও সঞ্জিতা চাকমা দুই বোন। তাদের প্রতিদিন দুই কিলোমিটারের বেশি পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। মাঝখানে আছে একটি ছড়া। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেই ছড়ায় নামে ঢল। তখন অভিভাবকদের এগিয়ে এসে কাঁধে করে ছড়া পার করে দিতে হয়।
শিশু দুটির বাবা নন্দ চাকমা বলেন, ‘এত কষ্টের পরও মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারতাম না যদি “মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন” (এমজেএফ) আর “টংগ্যা” বিদ্যালয়টি পরিচালনায় সহায়তা না দিত।’
নিহারিকা আর সঞ্জিতার মতো আরও ৬১টি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে বড়হরিণামুখ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বেসরকারি বিদ্যালয়টি তাদের পড়াশোনার একমাত্র ভরসা। ওই এলাকার চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো বিদ্যালয় নেই।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি (এসএমসি) ও মা দলের সদস্যরা জানান, ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে ২০০৬ সালে বেসরকারি সংস্থা এমজেএফের সহযোগিতায় স্থানীয় সংস্থা টংগ্যা বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তখন থেকে এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
এসএমসির সভাপতি অতিথি দেওয়ান বলেন, এমজেএফ-টংগ্যা বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের বেতনভাতা দেওয়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহনের দায়িত্ব না নিলে অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হতো।
জানা গেছে, ‘ইন্টিগ্রেটেড সাপোর্ট টু প্রমোট প্রাইমারি এডুকেশন ইন রিমোট এরিয়াস অব রাঙামাটি হিল ট্র্যাক্ট’ প্রকল্পের আওতায় এমজেএফ-টংগ্যার মাধ্যমে শিক্ষা সহায়তা দিচ্ছে। শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে আনতে প্রকল্পের আওতায় গঠন করা হয়েছে মা দল।
প্রকল্প সমন্বয়কারী মানবাশীষ চাকমা জানান, প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে বরকল উপজেলায় ২০টি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনায় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার শতভাগ।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার শিক্ষা কার্যক্রম সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলো পর্যাপ্ত নয়। সে কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে বইসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়।