কমিশন করে সম্প্রচার নীতি চূড়ান্ত করার দাবি

বিদ্যমান সম্প্রচার নীতিমালা মত প্রকাশ ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করবে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অংশগ্রহণে দ্রুত স্বাধীন একটি কমিশন গঠন করে মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার কথা বলেছেন একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বক্তারা।

আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আর্টিকেল ১৯-এর উদ্যোগে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪: উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এ নীতিমালায় ইতিবাচক উপাদানের বাইরে বিভিন্ন নেতিবাচক উপাদানের অপব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে অভিযোগ করে অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রচার নীতিমালা বাস্তবে যে অবস্থায় আছে তাতে করে সম্প্রচার বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে শুধু মত প্রকাশ বা তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’ তাই এর নেতিবাচক দিকগুলো সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রচার কমিশন গঠন করার পর নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘নীতিমালাটির তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায়ে এত বেশি না বলা হয়েছে যে, কোনো স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে এগুলো মানা সম্ভব নয়। এগুলো এ নীতিমালায় থাকার কোনো দরকার নেই। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সম্প্রচার কমিশন।’

এ ছাড়া নীতিমালার ষষ্ঠ অধ্যায়ের একটি ধারা সম্পর্কে সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আমরা জোরের সঙ্গে বলব, সম্পাদকীয় নীতিমালা কারও দ্বারা নির্দেশিত হতে পারে না। গণমাধ্যম যে স্বাধীন তার প্রমাণ হচ্ছে তার সম্পাদকীয় নীতিমালা তার নিজের কি না? ইত্তেফাক-এর সম্পাদকীয় নীতিমালা আর প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতিমালা এক হবে না। প্রথম আলোর নীতিমালা আর দৈনিক সংগ্রাম-এর নীতিমালা এক হবে না। আমরা সংগ্রাম-এর নীতিমালার সঙ্গে একমত না হতে পারি। কিন্তু তারা সেটা স্বাধীনভাবে করতে পারছে, সেটাই হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। এটা কারও ডিক্টেটেড হতে পারে না।’

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন নীতিমালাটিকে ‘নিয়ন্ত্রণমূলক’ অভিহিত করে বলেন, ‘একধরনের দাদাগিরি আছে এর (নীতিমালা) মধ্যে।’

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি ও সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য মোস্তফা জব্বার কমিশন গঠনের বিষয়ে বলেন, ‘যদি এটা সরকারি হস্তক্ষেপের বাইরে হয়, তাহলে মনে হয় এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না।’ তবে সব ধরনের গণমাধ্যমের জন্য অভিন্ন নীতিমালা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আয়োজক সংগঠনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রহমান, সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির আরেক সদস্য শফিউল আলম ভুঁইয়া প্রমুখ।