বৃষ্টিতে ভিজছে আর রোদে শুকাচ্ছে মুজিব নগরবাসী

ভোলার তেঁতুলিয়া নদীর মাঝে অবস্থিত চরফ্যাশন উপজেলার মুজিব নগর ইউনিয়ন। এখানে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুই হাজার পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় নেমে আসে বাতাস-বৃষ্টি। তারা সেই বৃষ্টিতে ভিজছে, আধঘণ্টা বৃষ্টিতে ভেজার পর আবার রোদ আসে। বৃষ্টিতে ভিজছে আর রোদে শুকাচ্ছে। অর্থাভাবে তারা ঘর দাঁড় করাতে পারছে না।

বিধবা শাহিনুর বেগম (৩৭) দুটি সন্তান নিয়ে আছেন দারুণ ভোগান্তির মধ্যে। ভেজা চুলার জন্য রান্না করতে পারছেন না। ঘরের কাঁথা-বালিশ শুকাতে দিচ্ছেন রোদে, আবার তা বর্ষায় ভিজে যাচ্ছে। রাতে ঘুমান পাশের সরিমন বিবির বারান্দায়। ঝড়ে পা ভেঙে গেছে বড় ছেলে রুবেলের। তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চর মনোহর বাঁধে বসবাস করা এ পরিবারটি খড়ের ঘরটি দাঁড় করাতে পারছে না। একই অবস্থা মো. সফি মাঝির (৩৪)। তিনি নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঝড়ের দিন তাঁর নৌকা উল্টে জালগুলো ভেসে যায় নদীতে।

মুজিব নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল অজুদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ৮২৫টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এক হাজার ১০০ ঘর। এগুলো বেশির ভাগ খড় ও টিনের। পাঁচটি স্কুলঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। মসজিদ-মক্তব বিধ্বস্ত হয়েছে ১০টি, কয়েক হাজার হাঁস-মুরগি মারা গেছে।

কৃষকেরা জানান, ইউনিয়নের প্রত্যেকের খেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। ছিঁড়ে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ৪৫ জনের নামে ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু সবাইকে এখনো টাকা দেওয়া হয়নি। ইউনিয়নে যাঁরা বিশেষ মৎ স্য ভিজিএফ ও ভিজিডি পাওনা আছে, তাঁদের তা বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ, তাঁরা টাকা-চাল কিছুই পাননি। চর শিকদারের মেলকার মিয়া, মো. কামাল হোসেনসহ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করা অনেকের ভাষ্য, তাঁদের এ পর্যন্ত চেয়ারম্যান-মেম্বার কিছুই দেননি। আর ১০-১২ কেজি চাল পেয়ে কিছুই হবে না।

ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে, বাগানে হাজার হাজার ফলদ-বনজ গাছ ভেঙে গেছে।

আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মালেক ও ইউনিয়নের বাসিন্দা আমান উল্যাহর ভাষ্য, চারপাশে যে রিং বাঁধ রয়েছে, এটাই ইউনিয়নে চলাচলের প্রধান সড়ক। ঝড়ে ও জোয়ারে সে বাঁধের চার-পাঁচটি স্থান ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকছে। লোকজনকে যাতায়াত করতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

সাংসদেরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়: ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের সাংসদ আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব ও ভোলা-৩ (লালমোহন ও তজুমদ্দিন) আসনের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী গত শুক্র ও গতকাল শনিবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেন। এ সময় নগদ অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন তাঁরা।