চট্টগ্রামে বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ

চট্টগ্রামে ইজিবাইক বন্ধ হওয়ায় গণপরিবহনগুলোতে অত্যধিক ভিড় লেগেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রীরা। কেইপিজেড এলাকা থেকে গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
চট্টগ্রামে ইজিবাইক বন্ধ হওয়ায় গণপরিবহনগুলোতে অত্যধিক ভিড় লেগেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রীরা। কেইপিজেড এলাকা থেকে গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

বিকল্প ব্যবস্থা না করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে দেওয়ায় চট্টগ্রাম নগরে তীব্র যানবাহন সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। প্রয়োজনের তাগিদে তাদের কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
গত ৩ জুলাই উচ্চ আদালত চট্টগ্রাম নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ গত রোববার থেকে নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়। হরতালের কারণে রোববার তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে গতকাল সোমবার সকাল থেকে এর প্রভাব তীব্র হয়ে ওঠে।
পুলিশের যানবাহন শাখা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরে ১১টি রুটে এক হাজার ২৫ বাস, ১৪টি রুটে ৭১০ হিউম্যান হলার ও ১৮টি রুটে এক হাজার ৬২০ টেম্পো চলাচল করে। এ ছাড়া বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চট্টগ্রাম নগরে যাত্রী পরিবহন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে নগরের অনেক বাসিন্দাকে রিকশা অথবা ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর নির্ভর করতে হয়।
ব্যাটারি রিকশা চালক-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম জানান, নগরে ব্যাটারিচালিত এক লাখের বেশি রিকশা রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (যানবাহন) এ কে এম শহিদুর রহমান জানান, এই সংখ্যা বড়জোর ৫০ হাজার হবে।
তবে সংখ্যা যা-ই হোক, গতকাল সকাল থেকেই শুরু হয়েছে শহরের যানবাহন সংকট। এই সুযোগে শহরের প্যাডেলচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। চালকেরা দেড় থেকে দুই গুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া দাবি করে। ফলে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিপাকে পড়েন।
নগরের জে এম সেন হলের পাশে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল বাওয়া স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা। ১৩-১৪ মিনিট পর একজন রিকশাচালক যেতে রাজি হলেও ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দাবি করেন। পরে দরদাম করে ৪৫ টাকা ভাড়া ঠিক করা হয়। নগরের তিনপুলের মাথা থেকে কাজীর দেউড়ি যেতে রিকশা খুঁজছিলেন শহিদুল আলম। চালক ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দাবি করেন। পরে ৩০ টাকা ভাড়ায় রিকশায় ওঠেন তিনি।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, অবৈধভাবে চললেও ব্যাটারিচালিত রিকশা নগরবাসীর প্রয়োজন মেটাত। তাই এ ধরনের রিকশা বন্ধের আগে বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত ছিল।
নগর পরিবহন গবেষক প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা প্রশাসনের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত।
পরিবহন সংকট ও ভাড়া বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (যানবাহন) শহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার পর অটোরিকশা ও প্যাডেলচালিত রিকশার ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে নতুন ভাড়ার তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ছোট গাড়ির ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে অটোরিকশার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। গতকালই পুলিশ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে মিটার পদ্ধতি চালু করতে বিআরটিএর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। মিটার পদ্ধতি চালুর আগে নগরে ২০০ পুলিশ সদস্যকে যাত্রীবেশে নামানো হবে। কেউ বেশি ভাড়া চাইলে পরিবহন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআরটিএর উপপরিচালক সমরেশ কুমার বিশ্বাস বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটার ২৫ টাকা এবং পরবর্তী এক কিলোমিটার সাত টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। যানজটে বা ট্রাফিক সংকেত থামলে প্রতি মিনিটের জন্য আরও এক টাকা ভাড়া ধার্য করা হয়। প্রায় তিন বছর আগে এই ভাড়া ঠিক হয়েছিল।