নিজেদের নেতাকে ট্রেন থেকে ফেলে মারল ছাত্রলীগ

ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিতে ট্রেনের টিকিটের জন্য গত বুধবার চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আর সেই সমাবেশ শেষে গত রোববার ফেরার পথে তাঁরা ঘটালেন আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা। চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করলেন নিজ সংগঠনের এক নেতাকে। ট্রেনের আসনে বসা নিয়ে সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কিছু সদস্য লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা তৌকির ইসলামকে (২২) হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভয়ে ট্রেন থেকে লাফিয়ে আহত হন লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের আরও দুই কর্মী। গত রোববার গাজীপুরের নিমতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তৌকির চট্টগ্রামের লোহাগাড়া বার আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এ বছর তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর বাড়ি উপজেলার মল্লিক ছোবহান এলাকার হাজীপাড়ায়।
জানা গেছে, লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি (একাংশ) রিদওয়ানুল হকের নেতৃত্বে তৌকিরসহ ২৮ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী রোববার ঢাকায় সংগঠনের সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশ শেষে ওই দিনই তাঁরা ট্রেনে করে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন।
জানা গেছে, ট্রেনের আসনে বসা নিয়ে সাতকানিয়ার উপজেলা ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর সঙ্গে তৌকিরের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে মারধর করে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার দুপুরে স্বজনেরা তৌকিরের লাশ চট্টগ্রাম নিয়ে গেছেন।
ঢাকা জিআরপি (রেল পুলিশ) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ জানান, চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে যাওয়ার সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুরের নিমতলীতে ছাত্রলীগের এক পক্ষ চলন্ত ট্রেন থেকে তৌকিরকে ফেলে দেয়। এ সময় চলন্ত ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় তৌকির মারা যান।
ঘটনার সময় ভয়ে ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েন লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মো. শাহেদ, আরাফাত, মোরশেদ ও রিছন। এর মধ্যে আহত শাহেদ ও রিছন ঢাকার উত্তরায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রিদওয়ানুল হক অভিযোগ করেন, তৌকিরকে হত্যার সঙ্গে সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কালাম, শুভ, আমিন, রুবেল, ইমন, আয়াজসহ বেশ কয়েকজন জড়িত ছিলেন।
গতকাল তৌকিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছেন মা আয়েশা বেগম। তিনি কেবলই বলছিলেন, ‘আমার ছেলে কখন ঘরে ফিরবে? কে আমার মানিককে এনে দেবে? ওকে আমার কাছে এনে দাও। আমার ছেলেটা খুব শান্ত। সে কোনো দিন আমাকে ছেড়ে ভাত খায়নি। ওরা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।’
তৌকিরের বাবা আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমি দরিদ্র কৃষক। খুব কষ্ট করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার শান্ত ছেলেটাকে যারা চলন্ত ট্রেন থেকে পিটিয়ে ফেলে হত্যা করেছে, তাদের যেন আইনের আওতায় আনা হয়।’
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান বলেন, ‘ট্রেনের আসনে বসা নিয়ে হাতাহাতির একপর্যায়ে তাঁকে ফেলে দেওয়া হয় বলে তথ্য পেয়েছি। এতে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়।’
লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণের কমিটি বিলুপ্ত: চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে পাঠানো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংগঠনের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই কমিটি বিলুপ্ত করা হলো।’ তবে কেন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট করা হয়নি।
লোহাগাড়ার ছাত্রলীগ নেতাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার ঘটনার জের ধরেই কেন্দ্রীয় কমিটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে।