সাভার দুর্ঘটনার পর সমন্বয়ে সময় লেগেছে

সাভারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ৯৪ দিন চলে গেছে। হাজারো মানুষের প্রাণহানির এই ঘটনার মূল্যায়ন করতে গিয়ে খোদ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক স্বীকার করলেন, সেই দুর্ঘটনায় সাড়া দিতে গিয়ে তাঁরা সময়ক্ষেপণ করে ফেলেছেন। এর জন্য দায় স্বীকার করে তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করলেন, ‘নগরে বড় দুর্যোগ হলে তা সামাল দেওয়ার মতো ব্যবস্থাপনা আমাদের নেই।’

গতকাল শনিবার বিকেলে ‘আমাদের দেখা সাভার দুর্যোগ: মূল্যায়ন ও করণীয়’ বিষয়ে এক সিম্পোজিয়ামে বিভাগের মহাপরিচালক আবদুল ওয়াজেদ বললেন, ‘দুর্ঘটনার পর সমন্বয় করতে গিয়ে আমাদের সময় লেগেছে। এত বড় ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আমরা সফলতার সঙ্গে সামাল দিতে পেরেছি। কিন্তু সাভারে সেটা হয়নি।’

রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ৩২৮১-এর ৩৮টি ক্লাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি অধ্যয়ন ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এই সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি কীভাবে জেঁকে বসেছে, রানা প্লাজার দুর্ঘটনা তার একটি উদাহরণ। ভবনটি নির্মাণের সর্বস্তরে দুর্নীতি হয়েছে।

রানা প্লাজায় যারা স্বজন হারানো পরিবারের প্রতিনিধি, বিরাট এই দুর্যোগে উদ্ধারকাজের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী, সার্বক্ষণিক কাজে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতাও শোনা গেল। এভাবে শোকের কথার সঙ্গে সাহসের উচ্চারণ চলল পাশাপাশি।

সাভারের দুর্যোগের সময় এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা এনামুর রহমান নিজ অভিজ্ঞতা স্মরণ করলেন, ‘সাভারে আমি একাত্তরকে নতুন করে দেখলাম।’

কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সেই স্মৃতির কথা উঠে এল সাভার সেনানিবাসের ৮১ পদাতিক ব্রিগেডের মেজর হুমায়ুন কবীরের কথায়। বললেন, বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবীরা অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন সাভারে। এই একতা যেকোনো যুদ্ধে জয়ী করবে এ দেশকে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাহবুবা নাসরীনের সভাপতিত্বে আলোচকেরা দাবি করলেন, যেসব পরিবার সেই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের প্রাপ্য সাহায্য যেন সঠিকভাবে পৌঁছে। যেন অসহায় সন্তানদের পড়াশোনার বন্দোবস্ত হয়। যারা পঙ্গু হয়ে গেছেন, তাঁদের কেবল চিকিৎসা-সহায়তা না, বেঁচে থাকার অবলম্বনের ব্যবস্থা করা হয়।

রাষ্ট্র যেন প্রতিটি মানুষের জীবনের মূল্যকে বোঝে, তাদের প্রতি মানবিক হয়—সেই আহ্বানও জানালেন বক্তারা।

রোটারিয়ান এমদাদুল হকের পরিচালনায় সিম্পোজিয়ামে আরও বক্তব্য দেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মোকাদ্দেম হোসেন, রোটারি ক্লাবের গভর্নর গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।