ছাতকের 'ইংলিশ টিলা' এখন ভয়ংকর বিপদ

.
.

টিলার ওপর ৫০ ফুট উঁচু একটি পাকা স্তম্ভ। ব্রিটিশ এক নারী তাঁর স্বামীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে এটি নির্মাণ করেছিলেন প্রায় দেড় শ বছর আগে। সেই থেকে এলাকাবাসীর কাছে এটি ‘ইংলিশ টিলা’ নামে পরিচিত। একসময়ের দৃষ্টিনন্দন এই স্মৃতিস্তম্ভ এখন সৌন্দর্য ও আবেদন—দুই-ই হারিয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাগবাড়ী এলাকায় এ টিলার অবস্থান। টিলাসহ দুই একর ৬০ শতক জমি সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। এই টিলার চারপাশে বসবাসরত প্রায় ৫০টি পরিবারের মাথার ওপর এখন বিপদ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে স্তম্ভটি। এর চারদিকে ফাটল ধরেছে। ভেঙে পড়েছে কিছু অংশও। যেকোনো সময় পুরোটি ধসে পড়তে পারে। ঘটতে পারে মানুষের প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
ছাতক²উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) গোলাম মাইনুদ্দিন বলেন, নিচ থেকে টিলার উচ্চতা কমপক্ষে দুই শ ফুট হবে। আর টিলার ওপর থেকে স্মৃতিস্তম্ভের উচ্চতা হবে আরও ৪০ থেকে ৫০ ফুট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে টিলার পাদদেশে ২৫টি দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারসহ নিজস্ব মালিকানার জমিতে আরও ২০ থেকে ২৫টি পরিবার রয়েছে। কয়েক বছর আগে টিলার উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়। এই উত্তর দিকের খুপড়ি ঘরগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। টিলার ওপরে উঠে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভটি চারকোণ আকৃতির। পাশেই জর্জ ইংলিশের সমাধি। সমাধির দেয়ালও ভেঙে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে এই স্তম্ভ ভেঙে ফেলা উচিত।
টিলার পূর্ব পাশে ১০ থেকে ১২টি টিনের বেড়া ও টিনের চালার ছোট ছোট ঘর। এদিকটাও ঝুঁকিতে আছে। টিলার একেবারে ঢালে প্রথম ঘরটি রোজিনা বেগমের। দুই সন্তান নিয়ে থাকেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ যাইমু কই, সরকার যদি জায়গা-জমিন দিয়ে ঘর বানাইয়া দিত, তাইলে উপায় অইত।’
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন বলেন, এটি নাকি ঐতিহ্যের অংশ, তাই ভাঙা যাবে না। গোলাম মাইনুদ্দিন বলেন, ‘এই টিলা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা থাকায় আমরা কোনো কিছু করতে পারছি না।’