চট্টগ্রামে আবাসিক ভবনে সাত পোশাক কারখানা

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার ২০ নম্বর সড়কে পাঁচতলা ভবনটি বানানো হয়েছিল আবাসিক কাজে ব্যবহারের জন্য। এই ভবন এখন পোশাক কারখানার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পলেস্তারা খসে পড়ছে আগ্রাবাদের জীর্ণশীর্ণ এই ভবনের। দেখা যাচ্ছে বিমের রডগুলোও। সেখানে রয়েছে সাতটি পোশাক কারখানা। প্রতিদিন কাজ করেন সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক। লোডশেডিংয়ের সময় একসঙ্গে আটটি জেনারেটরও চালু থাকে। একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক আবুল কাশেম জানালেন, টাকার জন্য ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন।সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত ও সিলগালা করার কাজ শুরু করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ১৩টি ভবন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে সিডিএ ৭ মে আগ্রাবাদের এই ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ইতিমধ্যে ভবনটি থেকে কারখানা সরানোর জন্য মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে সিডিএ সূত্র জানিয়েছে।চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম ওই ভবন থেকে পোশাক কারখানা এই মুহূর্তে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘একটি আবাসিক ভবনে কী করে এভাবে শিল্প কারখানার কাজ চলে?’সিডিএর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা জানান, ভবনটি নকশা অনুযায়ী সেখানে সাকল্যে ২০টি পরিবারের সর্বোচ্চ ১৬০ জন সদস্য এবং তাঁদের ব্যবহূত আসবাবপত্রের ভার নিতে পারবে। এখন এই ভবনে ১৬০ জনের পরিবর্তে সাড়ে তিন হাজার মানুষ কাজ করছেন। এ ছাড়া আসবাবপত্রের চেয়ে পোশাক কারখানার আরও ২৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি যন্ত্রপাতির ভারও ভবনটিকে নিতে হচ্ছে। সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটিতে আটটি জেনারেটর রয়েছে, যা লোডশেডিংয়ের সময় একসঙ্গে চালু থাকে। চালু থাকা জেনারেটরের কম্পনে ভবনের ভারের পরিমাণ আরও ৩০ গুণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ একটি আবাসিক ভবনকে শিল্প কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হলে তা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৫ থেকে ৬০ গুণ বেশি ওজনের ভার নিতে হয়। এতে ওই ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সরোয়ারউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে সাভারের রানা প্লাজার পরিণতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই চুয়েটের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁদের সুপারিশের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’ভবনটিতে রিদম নামের একটি পোশাক কারখানার অবস্থান। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কারখানার ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দেওয়ার পর অনেক শ্রমিক চাকরি ছেড়ে চলে গেছে। কেবল আমার কারখানা থেকেই চলে গেছে শতাধিক শ্রমিক। তবে ভবনটির ব্যাপারে চুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের সুপারিশ পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’ভবনটিতে লিংক ওয়্যার লিমিটেড নামের আরেকটি পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপক রতন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়ির মালিক তো ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন না। তবে সিডিএর প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রকৌশলীদের চূড়ান্ত মতামতের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’ভবনটির মালিক হোসেন আহমেদ বলেন, ‘বাইরে থেকে দেখলে আমার ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। ভেতরে গেলে দেখবেন এটি মজবুত। ১৯৮৮-৮৯ সালে ভবনটি নির্মিত হয়।’হোসেন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমার ভবনের দোতলা থেকে ওপরের দিকে কোনো জেনারেটর নেই। আটটি জেনারেটর নিচতলায়। এতে জেনারেটরের কম্পন থেকে আমার ভবন মুক্ত রয়েছে।’সিডিএর প্রকৌশলীরা ভবনের মালিকের বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন। প্রকৌশলীরা জানান, জেনারেটর ভবনের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, চালু করা হলে কম্পনের সৃষ্টি হবে।