ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রং লাগানোর তোড়জোড়

চট্টগ্রাম মহানগরে গত সাড়ে পাঁচ বছরে ৭৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মাত্র তিনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর তিনটি ভবন সিলগালা করে দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও জেলা প্রশাসন। বাকি ভবনগুলোতে এখনো জনবসতি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কিছু ভবনে বর্তমানে রং লাগানোর তোড়জোড় চলছে।২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর মহানগরের ৬০টি জরাজীর্ণ ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেয় সিডিএ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিডিএর প্রকৌশলীরা সরেজমিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিতকরেন। রানা প্লাজা ধসের পর আরও ১৩টি ভবন এ তালিকায় যুক্ত হয়। এগুলোর মধ্যে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সিডিএ সূত্র জানিয়েছে।চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ১০৯ ধারা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙার এখতিয়ার কেবল সিটি করপোরেশনের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙার জন্য কর্তৃপক্ষ একাধিকবার চেষ্টা করেও সফল হয়নি।এসব ভবনের বেশির ভাগই কোতোয়ালি, খাতুনগঞ্জ, পাথরঘাটাসহ পুরোনো চট্টগ্রাম এলাকায় অবস্থিত। সর্বশেষ পাথরঘাটা এলাকার একটি ভবন ভেঙে ফেলা হয় গত এপ্রিলে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আহমদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব ভবনের অনেকগুলো থেকে মালিকেরা ভাড়াটেদের সরাতে পারছে না। অনেক ভবনের মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। এর পরও আমাদের চেষ্টা থেমে থাকেনি।’ মহানগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাভারে ভবনধসের পর পাথরঘাটা ও খাতুনগঞ্জে দুটি ভবনে তাড়াহুড়া করে রং লাগিয়ে সেগুলোকে সাজানোর চেষ্টা চলছে।

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ইয়াকুব নবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালিকাভুক্ত ৬০ ভবনের মধ্যে তিনটি ভবন ইতিমধ্যে মালিকপক্ষ ভেঙে ফেলেছে। বাকি ৫৭টি ভবনের বিস্তারিত বিবরণ ও ছবি আমরা সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে কয়েকটি ভবনের বাইরে থেকে রং করা হয়েছে। তবে ভেতরে ঠিকই পলেস্তারা খসে পড়ছে।’

তালিকাভুক্ত ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে মহানগরের চান্দগাঁও থানাধীন খাজা সড়কের বুড়ির পুকুর পাড়ে হেলে পড়া একটি আবাসিক ভবন রয়েছে। অনুমোদন ছাড়া চারতলা ভবনটি পুকুরের একাংশ ভরাট করে তৈরি হয়। সম্প্রতি ওই ভবন থেকে ভাড়াটে চার পরিবারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।খাজা সড়কের হেলে পড়া ভবনটি সাত-আট বছর আগে নির্মিত হয় বলে স্থানীয় দোকানি মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন। ভবনটির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গত ২৭ এপ্রিল আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার জেকস ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। চারতলা এ ভবনে একটি তৈরি পোশাক কারখানা ও একটি বিমাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল। ভবনটির মালিক শেখ খুরশীদ আনোয়ার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আগেই সিডিএ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল।

সিডিএ সূত্র জানায়, ২ মে নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় ‘বাংলা হোটেল’ নামের আরেকটি জরাজীর্ণ ভবনে ভ্রাম্যমাণ আদালত তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

সিডিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলা হোটেলটি অনেক পুরোনো। এটি ভেঙে দিতে বলা হয়েছে।