ভবন নির্মাণের সময় শুধু রাস্তার বিষয়টি মানা হয়

সিলেট নগরে ৪০০ বহুতল ভবন রয়েছে। এক থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত ভবন রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ অনুযায়ী এসব ভবন নির্মাণে শুধু রাস্তার জন্য জায়গা রাখার বিষয়টি মানা হয়েছে। বেশির ভাগ নিয়মই মানেননি মালিকেরা। বিষয়টি কেউ তদারকও করেন না।নগরে কতটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ—এই সংক্রান্ত তথ্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। তারা শুধু ভবন নির্মাণের অনুমোদনই দিয়ে থাকে। তবে নগরের সাতটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। এগুলো হলো কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, খাদ্য অধিদপ্তর, কাস্টমস ও ভ্যাট, জেলা কালেক্টরেট (রেকর্ড) কার্যালয় ও মৃত্তিকা ভবন।ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জেলা কার্যালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী নগরের অধিকাংশ ভবনই ইমারত নির্মাণ বিধি ও জাতীয় বিল্ডিং কোড ২০০৬ অনুযায়ী নির্মিত হয়নি। তবে সেই ভবনের সংখ্যা কতটি তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।নগরের অভিজাত আবাসিক এলাকা শাহজালাল উপশহর প্রকল্প জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধীনে হওয়ায় সেখানকার বহুতল ভবনগুলোর অনুমোদন নেওয়া হয় ওই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। নগরের বাকি সব ভবনের নির্মাণকাজের অনুমোদন নেওয়া হয় সিটি করপোরেশন থেকে।অনুমোদন যে কর্তৃপক্ষই দিক না কেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করার কথা। বিধিমালা অনুযায়ী ৩০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার পর আরও পাঁচ ফুট ছেড়ে তবেই ছয়তলার অধিক বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে। শুধু ওই বিষয়টি মেনে নগরের সাগরদীঘিরপাড়, তেলি হাওর, সুবিদবাজার, তাঁতীপাড়া, শাপলাবাগ, আম্বরখানা, মির্জাজাঙ্গাল, পাঠানটুলা ও শাহজালাল উপশহর এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করতে দেখা গেছে।

সাগরদীঘিরপাড় এলাকায় সিলেট বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয়ের বিপরীতে সাততলাবিশিষ্ট একটি বাসার নির্মাণকাজ তদারককারী হাফিজুর রহমান বলেন, ইমারত বিধিমালা বলতে তাঁরা শুধু রাস্তার দিকটিই জানেন। বাকি সব বিষয় সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল দপ্তরই করে দেয়।অগ্নিকাণ্ড বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে ইমারত নির্মাণবিধি অনুযায়ী, সিঁড়ি বা লিফট ছাড়াও বিকল্প পথ অগ্নিনির্গমন পথ থাকতে হবে। কিন্তু সিলেটে ৯০ শতাংশ বহুতল ভবনে এই বিকল্প পথ নেই বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম।শহিদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এমনও দেখেছি যে ভবন নির্মাণ বছর পাঁচেক হয়ে গেছে, কিন্তু ভবনমালিকেরা অগ্নিনিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন। ভবনে বিকল্প পথ আছে কি না, দেখতে গেলেই নির্মাণাধীন বলে এড়িয়ে যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিমানা করা হলেও বিকল্প পথ আর নির্মাণ করা হয় না। এ জন্য সমন্বিত অভিযান প্রয়োজন।’পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক এস এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ভবন নির্মাণে কেউ পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে এলে আমরা বিষয়টি দেখতে পারি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ছাড়পত্র না পেলেও তা ভবন নির্মাতাদের আটকাতে পারে না।’সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সম্পর্কে অনেকেই ঠিকমতো জানেন না। আমরা ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং নকশা জমাদান ছাড়া কোনো ভবনের অনুমোদন দিই না।’নকশা ও আইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণকাজ তদারকি প্রসঙ্গে আজিজুর জানান, সাভারে ভবনধসের পর এ ব্যাপারে কাজ শুরু হয়েছে।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বাদল কুমার মণ্ডলও স্বীকার করেন, মূলত রাস্তার জন্য জায়গা রেখেই লোকজন ভবন নির্মাণ করছেন। তিনি বলেন, পরিপূর্ণভাবে বিধি ও আইন মেনে ভবন নির্মাণকাজ তদারকির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।