উদ্বোধনের চার মাসের মধ্যে হাসপাতালকে ভাড়া!

ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে এ ভবনটি একটি বেসরকারি হাসপাতালের কাছে ১০ বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার। তিনতলা এই ভবনের জন্য হাসপাতালের কাছ থেকে নেওয়া হবে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। ভবনটি উদ্বোধনের চার মাসের মধ্যে এ ঘটনা ঘটল। 
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকারের প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এ ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার তাঁর একক ক্ষমতায় হাসপাতালের কাছে ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। হাসপাতালের উপযোগী করার জন্য ভবনের অনুমোদিত নকশার অবকাঠামোও পরিবর্তন করা হয়েছে। ভবনের কোথাও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়নি।
দেশের সব জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহে এ ভবনটি গত বছরের ৮ অক্টোবর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২ ফেব্রুয়ারি ভবনটির নকশাবহির্ভূত নির্মাণকাজ করিয়ে ডিএসি সানরাইজ নামে একটি হাসপাতালকে ভাড়া দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভবনে নকশাবহির্ভূত নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট মানেনি। গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকেও এ কাজ বন্ধ করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু শোনেনি তারা। জেলা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন বুঝে পাওয়ার পরপরই নিজ উদ্যোগে ভবনটিতে নকশাবহির্ভূত নির্মাণকাজ করে পুরো ভবনটিই ভাড়া দেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের ব্যবহারের জন্য প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা কিছু আসবাব ও যন্ত্রপাতি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এবং কিছু আসবাব মুক্তিযোদ্ধা ভবনে অব্যবহৃত অবস্থায় আছে।
জানতে চাইলে এ প্রকল্পের পরিচালক মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, অনুমোদিত নকশাবহির্ভূতভাবে এ ভবন নির্মাণ করায় এবং বেআইনিভাবে ডিএসি সানরাইজ হাসপাতালকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জেলা ইউনিট কমান্ডারকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসককে হাসপাতালটি উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৬ আগস্ট এ কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শনে গেলে প্রকল্প পরিচালক এমন অনিয়মের তথ্য পান বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মকবুল হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ বছরের জন্য একটি হাসপাতালের কাছে ভাড়া দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হতো জানতাম না। আমরা ভেবেছি, এটা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সম্পদ, যা খুশি করতে পারব। যেহেতু বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, তাই দ্রুত অনুমতি নিয়ে নেব।’ ভাড়া দিয়ে কী করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংসদের অনেক খরচ আছে। সেগুলো মেটানো হবে।