নদী দখল করে পুকুর খনন

দুই তীর দখল ও বাঁধ দেওয়ায় শুকিয়ে গেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়ি ভৈরব নদ। উপজেলার গোপপাড়া এলাকায় শ্রমিক নিয়োগ করে নদীর মধ্যে পুকুর কাটছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা ষ প্রথম আলো
দুই তীর দখল ও বাঁধ দেওয়ায় শুকিয়ে গেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়ি ভৈরব নদ। উপজেলার গোপপাড়া এলাকায় শ্রমিক নিয়োগ করে নদীর মধ্যে পুকুর কাটছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা ষ প্রথম আলো

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নে বুড়ি ভৈরব নদীর দুই শতাধিক একর জায়গা দখল করে মাছ চাষের জন্য বড় বড় পুকুর কেটেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। পর্যায়ক্রমে নদীর জমি দখল করে পুকুর কাটা অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা।
কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে তিনটি মৌজায় নদীর প্রায় ৩০০ একর জমি রয়েছে। যার জমির মধ্যে ৬৬ একর জমি ১৯৮৯-১৯৯০ সালে ৬০ জন ভুমিহীনের মধ্যে ১৩টি শর্তে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হলো, জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না, পুকুর কাটা যাবে না, বর্গা দেওয়া যাবে না এবং বিক্রি করা যাবে না। এ ছাড়া প্রতি বছরের খাজনা পরিশোধ করতে হবে।
কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ খাঁ জানান, বন্দোবস্ত পাওয়া বেশির ভাগ ভূমিহীন ব্যক্তি এসব শর্ত ভঙ্গ করেছেন। মাত্র পাঁচ-ছয় জন ছাড়া অধিকাংশ ভূমিহীন তাঁদের জমি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেক প্রভাবশালী কৌশলে ভূমিহীনদের কাছ থেকে জমি দখলও করে নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর ভেতরের জমি দখলে নিয়ে পুকুর কাটেন। এখনো পুকুর কাটা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে তিনটি মৌজায় প্রায় ৫০টি পুকুর কাটা হয়েছে। এক থেকে ছয় একর আয়তনের পুকুরও কাটা হয়েছে এই নদীতে। বর্তমানে নদীটি তার চেহারা হারিয়ে ফেলেছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু পুকুর আর পুকুর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ সমশের একাই নদীর ছয় একর জমিতে পুকুর কেটেছেন। একইভাবে সাদিকপুর গ্রামের সিদ্দিক উলাহ চার একর জমিতে পুকুর কেটেছেন। কিন্তু তাঁর বন্দোবস্ত পাওয়া জমি রয়েছে এক একর। বেলাট দৌলতপুর গ্রামের রহমত বিশ্বাসের ছেলে স্বপন বিশ্বাস দুই একর ৩০ শতক জমিতে পুকুর কেটেছেন। তাঁর বন্দোবস্ত জমি রয়েছে মাত্র ৮৪ শতক। পাশাপাশি একাধিক স্থানে পুকুর কাটা অব্যাহত রয়েছে।
জানতে চাইলে রাশেদ সমশের দাবি করেন, তিনি বন্দোবস্ত নেওয়া ভূমিহীনদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন। গোটা পুকুরের জায়গায় তাঁর কেনা। কার কাছ থেকে কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি তা প্রকাশ করেননি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরাদুল হক বলেন, তিনি সরেজমিনে নদীর বেদখল হওয়া জায়গা পরিদর্শন করেছেন। ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৪৮ জন ব্যক্তি নদীর জমি দখল করে পুকুর কেটেছেন। এর আগে একবার দখলদারদের উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দুই-চারটি পুকুরের পারও কেটে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দখলদারেরা আবারও জায়গাগুলো দখল করেছে। এবার সবগুলো পুকুর উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা দখলমুক্ত করা হবে।