তথ্য কমিশনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাছে তথ্য চান সরকারের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার তরিকুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটি তথ্য না দেওয়ায় তিনি তথ্য কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন। কমিশনের তিনটি রায় বা সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, তিনি যে তথ্য চেয়েছেন তা গোপনীয় নয়। তবে কমিশনের এ রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘গোপনীয়তা’র অজুহাতেই বিআইডব্লিউটিসি তথ্য সরবরাহ করছে না।


গত আট মাসে কমিশন বিআইডব্লিউটিসির তথ্য দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চারবার সমন জারি করে। তিনি শুনানিতে তিনবার হাজির হন। কমিশন প্রতিবারই তরিকুল ইসলাম যে তথ্যগুলো চেয়েছেন, তা সরবরাহ করতে তাঁকে নির্দেশ দেয়। শুনানিতে তথ্য দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও পরে তা তিনি সরবরাহ করেননি।


আইন অনুযায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য দিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলে এই ধরনের কাজের তারিখ থেকে সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে জরিমানা আরোপসহ বিভাগীয় শাস্তিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করতে পারবে কমিশন। তবে কমিশন এ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তরিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


তরিকুল ইসলাম গত বছরের ২৫ আগস্ট তথ্য অধিকার আইনে ২০০৯ এর ৮ (১) ধারা অনুযায়ী জিইপি ডাকযোগে তথ্য চেয়ে আবেদন করেন। তিনি চট্টগ্রাম এক নম্বর টার্মিনালের বেইস স্টোর মেরামতকাজের বিল প্রদানে দীর্ঘ চার বছর ধরে কেন হয়রানি করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্থার অর্থ পরিচালকসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন, বিলের বর্তমান অবস্থানসহ কিছু বিষয়ে তথ্য জানতে চান। আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না পেয়ে অভিযোগকারী ওই বছরের ৮ অক্টোবর বিআইডব্লিউটিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও আপিল কর্তৃপক্ষ মজিবর রহমান বরাবর আপিল করেন। তার পরও তথ্য না পেয়ে ৮ ডিসেম্বর তিনি তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন।


প্রথম শুনানিতে হাজির হয়ে বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং তথ্য অধিকার আইনের অধীনে তথ্য দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, তরিকুল ইসলাম যে তথ্য চেয়েছেন তা গোপনীয় তথ্য হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তবে কমিশনের আদালত এসব তথ্য গোপনীয় নয় বলে মত দেন। তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য সরবরাহের অঙ্গীকার করেন। তারপর থেকে প্রতিবার একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।


চলতি বছরের ২২ জুলাই নজরুল ইসলাম ও বিআইডব্লিউটিসির উপসহকারী প্রকৌশলী নূর আলমের সই করা একটি জবাবপত্রে কিছু তথ্য দেওয়া হয়। সেখানেও তরিকুল ইসলাম যে চারটি প্রতিবেদনের তথ্য চেয়েছিলেন তাকে গোপনীয় নথির অংশবিশেষ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন না দিয়ে জবাব আকারে তথ্য দেওয়া যেতে পারে বলে বলা হয়।


প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, আইনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিবারই তথ্য দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তরিকুল ইসলামও তা মেনে নিয়েছেন। তাই অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে।


আইনে ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি—এ বিষয়ে কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।’


দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তরিকুল ইসলাম আসলে যে কী তথ্য জানতে চেয়েছেন, তা আমি বা কমিশনও বুঝতে পারেনি। তার পরও তাঁকে তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবারই বলেছেন, আমি নাকি মিথ্যা তথ্য দিয়েছি। আর যে প্রতিবেদনের কপি চেয়েছেন তা অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের “গোপনীয় নথির অংশবিশেষ” হওয়ায় তা তরিকুল ইসলামকে সরবরাহ করা হবে না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এসব প্রতিবেদনের কপি সরবরাহ করা হবে। সেই কর্মকর্তা পরে তা সরবরাহ করবেন।’


তথ্য কমিশন বলছে গোপনীয় নয়, আর আপনারা বলছেন তা গোপনীয় নথির অংশবিশেষ—এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তা গোপনীয় বলছি না। বলছি, গোপনীয় নথির অংশবিশেষ। আর তথ্য কমিশন যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে, সেভাবেই কাজ করেছি বলে কমিশন আমাকে কোনো শাস্তি দিতে পারেনি।’