ঘরে-বাইরে পশুর হাট

.
.

হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনা আবহমানকালের ঐতিহ্য। তবে শহুরে জীবনের ব্যস্ততা আর পরিবেশ-পরিস্থিতিতে অনেক সময় এই পরম্পরা রক্ষা করা হয়ে ওঠে না। এই বাস্তবতায় ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে ‘অনলাইন-গরুর হাট’।
প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটে থাকা শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইট, ই-কমার্স সাইট ও ফেসবুকভিত্তিক বেচাকেনার পেইজ থেকে কোরবানির পশু কেনা যাচ্ছে। যদিও এটা সংখ্যায় খুবই নগণ্য।
কিছু সাইট সরাসরি পশু বিক্রি করছে আবার কিছু ওয়েবসাইটে রয়েছে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপন দেখে ক্রেতা-বিক্রেতা যোগাযোগ করে বেচাকেনা করতে পারেন।
প্রবাসী ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে ২০০৫-০৬ সালের দিকে ওয়েব বাংলাদেশ ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট পবিত্র ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি শুরু করে। প্রবাসীরা পছন্দের পশু কিনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করলে বাংলাদেশে তাদের দেওয়া নির্ধারিত ঠিকানায় গরু পৌঁছে দিত ওয়েবসাইটটি।
এখন দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ায় এবং অর্থ লেনদেনের পদ্ধতি আগের চেয়ে সহজ হওয়ায় ই-কমার্স সাইটগুলোর প্রসার বাড়ছে। তাই এবারের ঈদে বেশ কিছু ‘ভার্চুয়াল গরুর হাট’ দেখা যাচ্ছে। শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনের সাইট বিক্রয় ডটকম, ওএলএক্স, এখানেই ডটকম, ক্লিকবিডি ডটকম ও ই-কমার্স সাইট, আমার দেশ ই-শপ, এখনই ডটকমসহ বিভিন্ন ওয়েব পোর্টাল গত কয়েক দিনে যেন রীতিমতো কোরবানির পশুর হাট হয়ে গেছে। প্রতিমুহূর্তেই ভার্চুয়াল এই হাটে গরু তুলছেন বিক্রেতারা।
ওয়েবসাইটগুলোতে গরু বা ছাগল বিক্রেতারা কাঙ্ক্ষিত দাম চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন। আর পশুটি পছন্দ হলে ক্রেতারা মুঠোফোনে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দামদর চূড়ান্ত হওয়ার পর ক্রেতারা নগদ পরিশোধ করে পশুটি নিয়ে আসেন। খোঁজখবর করে জানা গেল, গরুর ব্যাপারীরাই এখন বেশি বিজ্ঞাপন দেন।
ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখে কোরবানির পশু বা যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বেচাকেনার শেষ পর্বটা ক্রেতাকে নিজ দায়িত্বেই সারতে হয়। শ্রেণিবদ্ধ বা ক্লাসিফায়েড সাইটগুলোতে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন নিরীক্ষার প্রাথমিক ব্যবস্থা থাকলেও বেচাকেনার ব্যাপারে সাইটগুলোর কোনো দায়িত্ব থাকে না। তাই ক্রেতাকে সচেতন থেকেই কেনাকাটা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে স্বল্প সময়ের আলাপে কারও নির্ধারিত ঠিকানায় টাকা নিয়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অনেক প্রবাসীই এখন অনলাইনে গরু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন। এমন একজন নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে বসবাসকারী মোমিন আহমেদ। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার কারণে টানা ২৮ বছর তিনি কোরবানি দিতে পারেননি। গত বছর তিনি অনলাইনে প্রথম কোরবানির গরু কেনেন। ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিকটাত্মীয়ের বাসায় গরু পৌঁছে দিয়েছিল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সেখানেই তাঁর নামে পশুটি কোরবানি করা হয়। এবারও মোমিন আহমেদ একই প্রক্রিয়ায় কোরবানির পশু কিনেছেন।
শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইট বিক্রয় ডটকম অনুসরণ করে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় ৮৪টি কোরবানির পশুর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩টিই বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি গরু বিক্রির বিজ্ঞাপন, একটি ছিল ছাগল বিক্রির।
জানা গেছে, গত বছর ঈদের আগে বিক্রয় ডটকমে তিন হাজারের বেশি কোরবানির পশুর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। এ বছর ছয় হাজার পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন পাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। সাইটটির বিপণন ব্যবস্থাপক ইশিতা শারমিন প্রথম আলোকে জানান, রাজধানীতে পশুর হাট বসার পর অনলাইনে বিক্রি আরও বেড়ে যাবে। বিজ্ঞাপন দেওয়াও বাড়বে।
এখানেই ডটকমের মাধ্যমেও কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে। আগে এই পোর্টালটির নাম ছিল সেলবাজার। এই পোর্টালে গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৪২৩টি গরু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।
কয়েক বছর ধরেই আমার দেশ ই-শপ অনলাইনে গরু বিক্রি করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির দেশের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচিত কৃষক রয়েছেন। ওই কৃষকদের বেশির ভাগই পাবনা, গোপালগঞ্জ, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা। ওই কৃষকেরাই কাঙ্ক্ষিত দাম হাঁকেন, আর সেই দামের সঙ্গে লভ্যাংশ যোগ করে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গরু বিক্রি করে। গরুর দাম নগদ কিংবা ক্রেডিট কার্ডে পরিশোধ করলে গরু বাসায় পৌঁছে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য কোনো মাশুল নেওয়া হয় না। এই পোর্টালে এখন দেড় শর মতো গরু বিক্রির বিজ্ঞাপন রয়েছে। ইতিমধ্যে ছয়টি গরু বিক্রি হয়েছে। গত কোরবানির ঈদে ১৮টি গরু বিক্রি করেছে আমার দেশ ই-শপ।
প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে নয়, আমরা কৃষক বা গৃহস্থকে সরাসরি বাজারসুবিধা দিতে চাই। ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দিতে চাই, যাতে ন্যায্যমূল্য পান তাঁরা। আমরা খুব বেশি লাভ করি না।’