দলীয় বিবেচনায় আরও এক বিশ্ববিদ্যালয়

সবার পরামর্শ উপেক্ষা করেই দলীয় বিবেচনায় ‘সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে আরও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে একই দিনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে আছেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। তিনি বর্তমানে অনুমিত হিসাবসম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, যেকোনো সময় এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে। মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আরও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়ার তোড়জোড় চলছে।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিষয়টি স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিল্লায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়ার বিষয় ঠিক করেছি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বিবেচনাধীন আছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে সেগুলো দেওয়া হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বর্তমানে নতুন করে আরও ১৩৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রায় ১০০টির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে থেকে অনেকটা তড়িঘড়ি করে ‘সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়’-এর অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। অথচ কুমিল্লায় ‘কুমিল্লা’ ও ‘ব্রিটানিয়া’ নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ অবস্থায় সেখানে নতুন করে আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাই প্রশ্ন তুলেছেন।

মহাজোট ও বর্তমান সরকারের আমলে এখন পর্যন্ত ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকটি বাদে প্রায় সবগুলোর পেছনেই মন্ত্রী, সাংসদসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জড়িত। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়েও দলীয় বিবেচনায় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়।

সব মিলিয়ে দেশে এখন ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বাদে বাকিগুলোর বিরুদ্ধে শর্ত লঙ্ঘন, শিক্ষাবাণিজ্যসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আছে। ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ‘অবৈধ’ শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনই (ইউজিসি) বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া পর্যন্ত পদে পদে অনিয়ম হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা গত ১১ জুন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় দেশে নতুন করে আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে।