শ্রেণিকক্ষে আনসার ক্যাম্প

রামসিংহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান। পেছনেই রাখা আনসার সদস্যদের রান্নার সরঞ্জাম। ছবিটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর তোলা l প্রথম আলো
রামসিংহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান। পেছনেই রাখা আনসার সদস্যদের রান্নার সরঞ্জাম। ছবিটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর তোলা l প্রথম আলো

শ্রেণিকক্ষের ভেতর টেবিলের ওপর হাঁড়ি-পাতিল, কলস এবং জগ-গ্লাসসহ রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম। মেঝেতে রয়েছে চুলা ও পাটের খড়। আরেক পাশে দড়ির ওপর কাপড়চোপড় টাঙানো। অন্যদিকে পাঠ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাশের আরেকটি কক্ষে একজন মেঝেতে এবং আরেকজন খাটের ওপর ঘুমাচ্ছেন। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী নেই।
সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়নের রামসিংহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। ওই বিদ্যালয়সহ হাওরের আরও একটি বিদ্যালয়ে এভাবে শ্রেণিকক্ষ দখল করে ১০ বছর ধরে হাওর পাহারার জন্য পুলিশ-আনসারদের ক্যাম্পের কার্যক্রম চলছে। অপর বিদ্যালয়টি হলো শ্রীপুর (উত্তর) ইউনিয়নের মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধরমপাশা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৮টি মৌজায় ৫১টি বিলের সমন্বয়ে প্রায় সাত হাজার একর জায়গা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারা প্রথা বাতিল করার পর ২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে জেলা প্রশাসন হাওরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর হাওর এলাকায় চারটি স্থানে চারটি ক্যাম্প করা হয়।
রামসিংহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ওই বিদ্যালয়ে দুটি ভবন রয়েছে। একটি টিনশেডের পুরোনো ভবন এবং অন্যটি পাকা। পুরোনো ভবনে দুটি এবং নতুন ভবনে তিনটি কক্ষ রয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৭২ জন শিক্ষার্থী এবং চারজন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যে তিনজনই নারী। এক কক্ষে ক্লাস নেওয়ার সময় পাশের কক্ষে পুলিশ-আনসার সদস্যরা থাকায় বিব্রতবোধ করেন তাঁরা। প্রধান শিক্ষক দোলন রায় বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয় থেকে ক্যাম্প সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের বলেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও দুটি ভবন রয়েছে। পুরোনো ভবনে তিনটি কক্ষের একটিতে ক্যাম্প।
প্রধান শিক্ষক এ কে এম ইউসুফ জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪১২ জন আর শিক্ষক তিনজন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের পাঠদান শুরু করতে গিয়ে তিনি ক্যাম্প কমান্ডারকে বলেছিলেন বিদ্যালয়ের কক্ষ ছেড়ে দিতে। কিন্তু তাঁরা ছাড়েননি। তাই শ্রেণিকক্ষ-সংকটের কারণে সেটি শুরু করা যায়নি। সেলিম আহমদ নামের স্থানীয় এক তরুণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্রামের একটি স্কুলের ভেতরে ১০ বছর ধরে ক্যাম্প আছে। এতে গ্রামের লোকজনেরও সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, ধরমপাশা ও জামালগঞ্জ) সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে ক্যাম্প সরানোর জন্য বহুবার বলেছি। এই তো গত দুই মাস আগেও আরেকবার বললাম। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে আর কোনো কিছু জানানো হয়নি। ক্যাম্পও সরানো হয়নি।’
টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পের জন্য বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পাওয়া গেলে বিদ্যালয় থেকে ক্যাম্পগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।