কোরবানির পশু পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচায় পরিবহন সংস্থাগুলো গরু পরিবহনে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গরু ব্যবসায়ী এবং আরিচার পরিবহন সংস্থা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিবছরই দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য কোরবানির গরু আরিচা হয়ে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং এর আশপাশের কয়েকটি জেলায় নেওয়া হয়। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর ও নওগাঁ থেকে ব্যবসায়ীরা গরু কিনে পাবনার কাজীর হাট ও সিরাজগঞ্জের চৌহালী থেকে ট্রলারে করে যমুনা নদী পার হয়ে আরিচা ঘাটে নিয়ে আসেন। এবারও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা নদীপথে আরিচা ঘাটে তাঁদের গরু নিয়ে আসছেন। আরিচা ঘাটে প্রায় ১৫টি পরিবহন সংস্থা রয়েছে। এসব সংস্থার ট্রাকে করে গরু আরিচা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছর ঈদের তিন থেকে চার সপ্তাহ আগে বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশু সরবরাহ করা হলেও এবার এক সপ্তাহ আগে থেকে গরুগুলো আরিচা ঘাটে আনা হচ্ছে। ফলে গাড়ির চাহিদাও বেড়ে গেছে। আর এ সুযোগে পরিবহন সংস্থার লোকজন যানবাহনের সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তাঁদের কাছে ব্যবসায়ীরা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
আরিচা ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন আকারের ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে পাবনার কাজীর হাট ও সিরাজগঞ্জের চৌহালী থেকে যমুনা পার হয়ে আরিচা ঘাটে কোরবানির গরু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এরপর ব্যবসায়ীরা গরুগুলোকে ঘাটে বেঁধে রাখছেন। তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে গরুগুলো আরিচা ঘাটের বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন।
দুপুর ১২টার দিকে আরিচা ঘাটে কথা হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের গরু ব্যবসায়ী আলামিন শেখ ও পাবনার বেড়ার গরু ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, গত বছর এই ঘাট থেকে ঢাকার গাবতলী ও আগারগাঁওয়ে পরিবহন ভাড়া ছিল পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। কিন্তু পরিবহনসংকটের কথা বলে এবার আট থেকে নয় হাজার টাকা নিচ্ছে পরিবহন সংস্থা। ঈদ উপলক্ষে পরিবহন সংস্থাগুলোর ভাড়ার কোনো তালিকাও নেই।
পাবনার বেড়া উপজেলার ছোট পায়না গ্রামের আসাদুল ব্যাপারী বলেন, গত মঙ্গলবার আরিচা ঘাট থেকে দুটি ট্রাকে করে ৪২টি গরু তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নেন। এ জন্য তাঁকে ট্রাকপ্রতি ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।
ব্যাপারী পরিবহন সংস্থার মালিক আবু সাঈদ বলেন, ট্রাকে ওঠানোর আগে তাঁদের কর্মচারীরা গরুগুলোকে গোসল করানোসহ নানা সেবাযত্ন করছেন। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা পরিবহন ভাড়া বেড়েছে।
আলতাব পরিবহন সংস্থার ব্যবস্থাপক সজীব হোসেন বলেন, ‘ভাড়ার জন্য নির্ধারিত কোনো হার নেই। গরুর চাপ বেড়ে গেলে ভাড়াও কিছুটা বেড়ে যায়। তবে আমরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছি না।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘পশুবাহী পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।’