সাক্ষীদের চিঠি গায়েব করার অভিযোগ

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদলের নেতা জমির উদ্দিন হত্যা মামলার সাক্ষীদের জন্য ইস্যু করা চিঠি গায়েব হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২০ বছর পর চাঞ্চল্যকর মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য এসেছে।
ছাত্রশিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার নাছিরউদ্দিন চৌধুরীসহ ১৫ জন এই মামলার আসামি। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ ও নিজেদের অন্তর্কোন্দলে শিবিরের দুই শীর্ষ ক্যাডার বিগত জোট সরকারের আমলে নিহত হন।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষীদের হাজির হতে ইস্যু করা চিঠি গায়েব হওয়ায় আটটি কার্যদিবসে শুনানি করা যায়নি। গত ১, ২, ৩, ৪, ৮, ১০, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২৩, ২৮, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এর মধ্যে মামলার বাদীর সাক্ষ্য ও জেরা ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। আগামী ১২, ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির দাবি, সাক্ষীদের হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধার্য তারিখগুলোতে তাঁরা না আসায় সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মো. আইয়ুব খানের দাবি, ২, ৩ ও ৪ নম্বর সাক্ষীকে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। তাঁরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না। এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে তাঁদের আবার চিঠি দেওয়া হবে।
মামলাটির ৬ নম্বর সাক্ষী মোহাম্মদ শাহেদ পিপির বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কোতোয়ালি থানায় খবর নিয়ে আসছি। কারণ সাক্ষী হিসেবে আমার ঠিকানা কোতোয়ালি থানা এলাকায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমি কিংবা অন্যদের নামে কোনো চিঠি বা সমন আদালত থেকে থানায় পাঠানো হয়নি। আমার ধারণা, সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য আমাদের নামে ইস্যু করা চিঠি গায়েব করা হয়েছে।’
মোহাম্মদ শাহেদ আরও বলেন, ‘আমাদের সামনেই জমির এবং ফরিদকে খুন করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে অভিযোগপত্রে আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য আসে। সাক্ষী দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আমাদের নামে কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি। অথচ পত্রিকায় লেখা হচ্ছে যে সাক্ষীরা শিবির নাছিরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন না।’
একই মামলার ২ নম্বর সাক্ষী আবু তাহের বলেন, ‘জমির খুনের বিচার আমি চাই। কিন্ত আদালত থেকে আমার নামে কোনো চিঠি পাঠানো হয়নি।’ ৫ নম্বর সাক্ষী নুরুল কবিরও চিঠি পাননি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
কোনো মামলায় সাক্ষীকে হাজির করতে বিচারকের নির্দেশে চিঠি ইস্যু করা হয়। সেই চিঠি পুলিশের মাধ্যমে সাক্ষীর কাছে পৌঁছানো হয়, যাতে ধার্য তারিখে সংশ্লিষ্ট সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। কিন্তু থানায় কোনো চিঠি আদালত থেকে পাঠানো হয়নি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাক্ষীদের কাছে চিঠি বা সমনের কোনো কাগজ আদালত থেকে আমরা পাইনি।’
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ২৫ আগস্ট মামলাটি বিচারের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে। এরপর আসামি হারুন অর রশিদ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনেন। এই স্থগিতাদেশ খারিজ হয় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। প্রায় সাত বছর পর চলতি বছরের ২৬ আগস্ট স্থগিতাদেশ খারিজের নথি পাওয়া যায়।
আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর পলিটেকনিক ছাত্র সংসদের জিএস জমির উদ্দিন ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর ফরিদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জমিরের ভাই আজিজউদ্দিন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। পরের বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি পাঁচলাইশ অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার এ টি এম জসিম উদ্দিন ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন আদালতে।
জমির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিরা হলেন শিবির ক্যাডার নাছির, ইয়াকুব বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব, হুমায়ুন বাহিনীর প্রধান হুমায়ুন কবির, দেলোয়ার হোসেন, কাজী ওসমান গণি, ইব্রাহিম, হারুন অর রশিদ, শওকত হোসেন, সাহাবুদ্দিন, হুমায়ুন কবির, নুরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মোকসেদ আলম, আবদুল মান্নান, আহসানুল আজাদ, আবদুল কুদ্দুস ও ইয়াকুব। কারাগারে আছেন নাছির ও কুদ্দুস। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইয়াকুব এবং নিজেদের অন্তর্কোন্দলে হুমায়ুন খুন হন।