ক্রেতাদের লাভ, ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পশ্চিম পাইকপাড়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বোর্ডিং মাঠে ঈদের আগের দিনে প্রচুর গরু উঠলেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। ছবি: শাহাদত্ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পশ্চিম পাইকপাড়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বোর্ডিং মাঠে ঈদের আগের দিনে প্রচুর গরু উঠলেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। ছবি: শাহাদত্ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

গরু বিক্রেতাদের মুখে হাসি ছিল গতকাল শনিবারও। কিন্তু আজ রোববার তার উল্টো চিত্র।

যে গরুগুলো গতকালও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায়ও বিক্রি করা হয়নি, সেই গরুগুলো আজ লাখ টাকা বা তার নিচে বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি গরুগুলো ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যেই স্বাচ্ছন্দ্যে কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এমনই চিত্র দেখা গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পশ্চিম পাইকপাড়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বোর্ডিং মাঠে একমাত্র কোরবানির পশুর হাটে।

শহরের ভাদুঘর এলাকার গরু ব্যবসায়ী হাজি ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এবার ২১ লাখ টাকায় ১৭টি গরু কিনেছেন। এ পর্যন্ত তিনি চার লাখ টাকায় তিনটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। একই গ্রামের বাছির মিয়া বলেন, ১৪ লাখ টাকায় তিনি ১১টি গরু কিনেছেন। এর মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করেছেন। বাকিগুলো বিক্রি করে পুঁজি তুলতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে চিন্তিত তিনি।

গরুগুলো বিক্রি না হলে কী করবেন জানতে চাইলে বাছির মিয়া বলেন, ‘খামারে রাখব।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর সবচেয়ে বড় গরুটি গতকাল শনিবারও এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দাম বলে গিয়েছিল এক ক্রেতা। আর আজ সেই গরুটি সর্বোচ্চ দাম হয়েছে এক লাখ টাকা। 

এদিকে শহরের দক্ষিণ পৈরতলা এলাকার গরু ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, তার ছয়টি গরু ছিল। তিনটি বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে প্রথম বাজারে তার সবচেয়ে বড় গরুটির দুই লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হয়েছিল। গতকাল শনিবার সেটির এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা দাম হয়েছিল। আজ সেই গরুটির সর্বোচ্চ এক লাখ ২০ হাজার টাকা দাম হয়েছে। তিনিও আক্ষেপ করে বলেন, এই গরুটি তিনি আজ বিক্রি করবেন না।

সদর উপজেলার বিরামপুর গ্রামের খলিল মিয়া বলেন, গতকাল যে গরুর দাম হয়েছিল দুই লাখ ১০ হাজার টাকা, সেই গরুটি আজ তিনি এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি ১৩টি গরুর সব কটি বিক্রি করলেও তাঁর লোকসান হয়েছে চার লাখ টাকা। তিনি জানান, ‘মন ভালো নেই, তাই বাড়ি যাচ্ছি না।’

তারা সবাই জানান, এবার তাঁদের প্রত্যেকের লোকসান গুনতে হবে। পুঁজি উঠবে কি না, সেটাই ভাবছেন তাঁরা।

এদিকে বাজারে মাঝারি গরুর গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত ভালো দাম পাওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে দাম নেমে পড়ে। যে গরু গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন, সেই সব গরু এখন ৪০ থেকে ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান নাহিদ মিয়া, সাইদ মিয়া, আলমগীর হোসেনসহ অনেক ব্যবসায়ী।

আজ বিকেল চারটার দিকে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে গরু ভর্তি। কিন্তু ক্রেতা একেবারে কম। কেউ এলেই বিক্রেতারা ডাকাডাকি শুরু করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্পূর্ণ ইজারামুক্ত হওয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতার সব চোখ পড়ে থাকে এই বাজারে।

চিকিত্সক হাসনাইন সরকার জানান, ‘সব সময় শেষ বেলায় গরু কিনতে আসি। এবার ৪০ হাজারের মধ্যে ছোট গরু কিনব ভেবে বাজারে আসি। কিন্তু এই স্বল্প বাজেটে ভালো গরু কিনতে পারব ভাবতে পারিনি।’

প্রকৌশলী কায়জার নুর অয়ন জানান, ‘তিনি ৫০ হাজার টাকায় গরু কিনতে বাজারে যান। এ টাকায় তিনি ভালো গরু পেয়েছেন।