আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে: সন্তু লারমা

সন্তু লারমা
সন্তু লারমা

আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, তিনি ও তাঁর সরকার আদিবাসীবান্ধব নয়, কোনোদিন আদিবাসীবান্ধব হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
আজ শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সন্তু লারমা বলেন, ‘১৬ বছর আগে আপনি যে চুক্তি করেছিলেন, আমি প্রশ্ন করছি ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও সে প্রতিশ্রুতি কেন পালন করেননি? উত্তরে আপনি অনেক কথাই বলতে পারেন। আমি বলব, আপনি পাহাড়ের আদিবাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, প্রতারণা করেছেন। আপনি ও আপনার সরকার আদিবাসীবান্ধব হতে পারেননি। কোনো দিন হতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে।’

সন্তু লারমা বলেন, ‘যখন কোনো চুক্তি হয়, তখন এর দুটি পক্ষ থাকে। কিন্তু এর বাইরে আরেকটি তৃতীয় পক্ষ থাকে, সেটি হলো সাধারণ মানুষ। দুই পক্ষের বাইরে চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিকদের যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তাঁরা সেটি পরিপূর্ণভাবে করতে পারেননি। আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণ হিসেবে সন্তু লারমা বলেছেন, ৪২ বছর অতিবাহিত হয়েছে। যেসব সরকার ও শাসক এসেছেন, তাঁরা উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন এবং আদিবাসীদের প্রতি সব সময় বৈরী মনোভাব দেখিয়েছেন। বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হলেও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হতে পারেনি। এর ফলে সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীরা তাদের জীবনধারা হারাতে বসেছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, চুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেসকো শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হলেন। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত হলো না।

বিশেষ অতিথি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘অন্তত আদিবাসী প্রশ্নে মানবাধিকার কমিশন পুষ্টিহীন বিড়াল না, রয়াল বেঙ্গল টাইগার।’

চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশিস রায় বলেন, পার্বত্য চুক্তির সময় লিখিত চুক্তি ছাড়াও একটি অলিখিত চুক্তি হয়েছিল। সেটি হলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে পাহাড়ে যেসব অভিবাসন ঘটানো হয়েছে, সেই সমস্যা সমাধান করা। এটিরও বরখেলাপ করা হয়েছে। চুক্তি করার পর বরখেলাপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার, কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন প্রমুখ।

এর আগে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।

প্রতিবছর ৯ আগস্ট আদিবাসী দিবস উদযাপন করা হয়। তবে এ বছর ওই সময় ঈদের ছুটি থাকায় আজ আদিবাসী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।