একাত্তরে বয়স ১৫ হলেই মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তি
মুক্তি

একাত্তর সালে যাঁদের বয়স ১৫ বছরের নিচে ছিল, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা নন, এমন বিধান রেখে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা ঠিক করা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৫ বছর বয়সের নিচে কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না।
এ ছাড়াও নতুন সংজ্ঞায় একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যাঁদের এতদিন বীরাঙ্গনা বলে ডাকা হতো।
আজ সোমবার রাজধানীর মগবাজারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কার্যালয়ে জামুকার ২৫তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন সংজ্ঞার আলোকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ার জন্য ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
আজ রাতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যাঁদের বয়স কমপক্ষে ১৫ ছিল, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করতে পারবেন।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা অনেকে ভুয়া বলে প্রমাণিত হওয়ার পর নানা সময় তা নিয়ে বিতর্ক উঠছিল। তাই বিভিন্ন তালিকা সন্নিবেশিত করে যাচাইবাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট এক আদেশে বীরাঙ্গনাদের কেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না, তা জানতে চায় সরকারের কাছে।
নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী লাল মুক্তিবার্তা, ভারতের তালিকা (বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের), প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত সনদধারী, প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশের সীমানা পার হয়ে ভারতে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্তকারীরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।
নতুন সংজ্ঞায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে নির্যাতিত নারীরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হতে পারবেন। স্বাধীনতার পক্ষে যেসব পেশাজীবী জনমত গঠন করেছেন, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়, স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা গ্রহণকারী সাংবাদিকেরা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্ত হতে পারবেন।
আহত মুক্তিযোদ্ধাদের শুশ্রূষাকারী চিকিৎসক, নার্স ও তাঁদের সহকারীরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, এমএলএ ও এমপিরা নতুন সংজ্ঞার আলোকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে স্থাপিত অফিসগুলোর দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও নতুন সংজ্ঞার আলোকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্ত হতে পারবেন।
নতুন সংজ্ঞার আলোকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাওয়া কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী।

জামুকার এ সভায় নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান উপস্থিত ছিলেন।