কমিটি নিয়ে আ.লীগে গৃহদাহ

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ চরম আকার ধারণ করেছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষ প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করছে। এ নিয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান ওরফে আওলাদ এবং অপর পক্ষে করিমগঞ্জের বাসিন্দা কিশোরগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এ বি এম সিরাজুল ইসলাম। এক পক্ষ কমিটি গঠনের জন্য সম্মেলনের তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করলে অপর পক্ষ একই তারিখ ও স্থানে পাল্টা সম্মেলন আহ্বান করছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন সম্মেলনের নির্দিষ্ট স্থানে জারি করছে ১৪৪ ধারা।
গতকাল বুধবার ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কিরাটন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সম্মেলনের ডাক দেয় উভয় পক্ষ। এ কারণে উপজেলা প্রশাসন ওই স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করে। আজ বৃহস্পতিবার গুজাদিয়া আবদুল হেকিম উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গুজাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন আহ্বান করেছে দুই পক্ষ। সেখানেও ১৪৪ ধারা জারি হবে বলে নিশ্চিত করেছে করিমগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন।
গত সোমবারও দুই পক্ষ দেহুন্দা উচ্চবিদ্যালয়ে দেহুন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন আহ্বান করলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। একের পর এক ১৪৪ ধারা জারি করা সত্ত্বেও উভয় পক্ষ ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সম্মেলনের মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি তিনটি ইউনিয়নের কমিটি গঠন করেছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসেম চৌধুরীর সঙ্গে বর্তমান আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খানের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল। তাঁরা একজোট হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ইউনিয়ন এবং পৌরসভার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করলেও বেঁকে বসেন সিরাজুল ইসলাম।
জানা গেছে, প্রায় ১২ বছর আগে নাসিরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে ৪৫ সদস্যের উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক হওয়ার এক যুগেও বিরোধের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি নাসিরুল। উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভাজনের জন্য জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, স্থানীয় সাংসদ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়ী করছে নাসিরুল পক্ষ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হাসেম চৌধুরী বলেন, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে একটি পক্ষ পাল্টা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করছে। তাঁরা করিমগঞ্জ আওয়ামী লীগের কেউ নন। দলে বিভেদ সৃষ্টি করে তাঁরা ফায়দা লুটতে চান।
নাসিরুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, ‘সিরাজুল করিমগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে চুন্নুর হয়ে জাতীয় পার্টি, ঢাকায় মির্জা আব্বাসের হয়ে বিএনপি এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্বাচনী এলাকা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রীর রোষানলে পড়ে আমরা সরকারি দলের হয়েও মনে হয় বিরোধী দলে আছি।’
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এ বি এম সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আহ্বায়ক জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে না মেনে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সম্মেলন আহ্বান করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘দলকে রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত করতে আমরা বাধ্য হয়ে পৃথক অবস্থান নিয়েছি।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘মহাজোটের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। তাঁদের নিজেদের মধ্যে যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে, এটা তাঁদের দলীয় ব্যাপার। আমি কখনো স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করিনি।’