থাইল্যান্ডে পাচার ১৭১ জন 'বাংলাদেশি' উদ্ধার

থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলের বন্দিদশা থেকে গত এক সপ্তাহে ১৭১ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তাঁরা সবাই পাচারের শিকার। উন্নত চাকরির লোভ দেখিয়ে তাঁদের ওষুধ খাইয়ে ও হাত-পা বেঁধে নৌকায় করে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর বিবিসির।
কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক গতকাল শনিবার রাতে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে যাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১২২ জন বাংলাদেশি বলে তাঁরা তথ্য পেয়েছেন। বাকিরা মিয়ানমারের নাগরিক হতে পারেন। উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের ব্যাপারে তাঁরা ইতিমধ্যে থাইল্যান্ড সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা যাতে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের জাতীয়তা যাচাই করতে পারেন, সে জন্য থাই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশিদের জাতীয়তা নিশ্চিত করার পর তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তাঁদের আপাতত থাংরা প্রদেশে রাখা হয়েছে।
এদিকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের এখন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে কারাগারে পাঠাতে চাইছে থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সরকার ও পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু এই পদক্ষেপ নিয়ে সে দেশেরই কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা, অতীতে এ ধরনের অবৈধ অভিবাসীরা কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁদের আবার পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের উপকূলে জঙ্গলের মধ্যে লুকানো কিছু ক্যাম্প থেকে মোট ১৭১ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের দাসশ্রমিক হিসেবে খেতখামার ও মাছ ধরার নৌকায় বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার আগেই স্থানীয় জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া আবদুর রহিম নামের এক বাংলাদেশি বলেছেন, তাঁদের জঙ্গলে নিয়ে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। ১০ দিন তাঁরা শুধু গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলেন। থাই দালালেরা তাঁকে এমন মারধর করেছেন যে তিনি এখন খুঁড়িয়ে হাঁটছেন।
এসব পাচার হওয়া লোকজনকে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেই জায়গাটি ঘুরে দেখেছেন বিবিসির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন হেড। তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা এখন যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে চাইছেন।
থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরেই মানব পাচার একটি বড় সমস্যা। মাছ ধরার নৌকাগুলোতে দাসশ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ ওঠায় ইউরোপে সি-ফুডজাতীয় খাবারের বাজার হারাচ্ছে দেশটি। এ ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরই মানব পাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল থাই সরকার। কিন্তু পাচার হওয়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারের ঘটনার পর ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র এখনো সক্রিয়।