৩৫ হাজার একর জমিতে সেচ-সংকটের আশঙ্কা

চালকলের ছাই ফেলে আশুগঞ্জ-পলাশ অ্যাগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের খাল ভরাট করে ফেলায় এর আওতাভুক্ত ৩৫ হাজার একর জমিতে সেচে সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাই ফেলা বন্ধ ও তা অপসারণের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
এ ব্যাপারে মিলমালিকদের চিঠি দেওয়া হলেও তাতে কোনো ফল হচ্ছে না। ফলে আগামী ইরি-বোরো মৌসুমের সেচ পরিচালনা নিয়ে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কৃষকেরা শঙ্কায় রয়েছেন। ভুক্তভোগী কৃষক শাহ আলম (৪৮) বলেন, ‘ছালি (ছাই) পানিরে কালি কইরা দিছে। গেছে বছর একরপ্রতি তিন মণ কইরা ধান কম পাইছি। এবার তো পথই বন্ধ। কী আছে কপালে, কে জানে।’
স্থানীয় লোকজন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহৃত পানি একসময় নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। ১৯৯২ সাল থেকে কেন্দ্র দুটির পানি নদীতে না ফেলে সেচকাজে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয় বিএডিসি। আশুগঞ্জ প্রকল্পের আওতায় ২৫ কিলোমিটার খাল রয়েছে। এর মাধ্যমে আশুগঞ্জ ও একই জেলার সরাইল উপজেলার কৃষকেরা নামমাত্র মূল্যে একরপ্রতি শ্রেণিভেদে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা হারে সেচসুবিধা পেয়ে আসছেন। অথচ প্রকল্পের বাইরের কৃষকদের একরপ্রতি চার-পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সেচসুবিধা নিতে হয়। প্রকল্পের পানি বিশুদ্ধ হওয়ায় তুলনামূলক ফলনও ভালো হয়। আগামী বছরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ইরি-বোরো মৌসুমে আবারও সেচ চালু হবে।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার খাল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত গেছে। খালের এই অংশটিই সেচের প্রবেশপথ। খালের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অন্তত শতাধিক চালকল। আর মহাসড়ক থেকে চালকলে যেতে খালের ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের শতাধিক সাঁকো। এসব চালকলে ধান সেদ্ধ করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ধানের তুষ। পরে তুষের ছাই ফেলা হচ্ছে খালে। এ কারণে আশুগঞ্জের সোনারামপুর, বাহাদুরপুর, কামাউড়া, খড়িয়ালা এবং সরাইলের কুট্টাপাড়া, শান্তিনগর ও বেড়তলা এলাকায় চালকলের ফেলা ছাইয়ের স্তূপে খাল প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।
বিএডিসি আশুগঞ্জ ইউনিটের উপসহকারী প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন মজুমদার বলেন, মিলমালিকেরা প্রভাবশালী। কোনো আইনেই তাঁদের আটকানো যাচ্ছে না। শুধু এ কারণেই প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
বিএডিসি সূত্র জানায়, চার বছর ধরে মিলমালিকেরা এই খালে ছাই ফেলছেন। দিন দিন এর মাত্রা বাড়ছে। চলতি বছর এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে মৌসুমে সেচ পরিচালনা করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে চালকলের মালিকদের চিঠি দিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না।
সোমবার বিকেলে খালে ছাই ফেলার সময় কামাউড়ার আরাফাত রাইস মিলের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। ওই মিলের সামনে খালের অংশটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা জানান। পরে বলেন, ‘কী করুম। আর কোনো জায়গা নাই।’ শান্তিনগর এলাকার আবেদা রাইস মিলের সামনেও একই চিত্র দেখা গেছে।
আশুগঞ্জ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেচের সময় এলে নিজ দায়িত্বে ছাই সরিয়ে ফেলি। এবারও তাই করা হবে। খালে যেন আর ছাই ফেলতে না হয়, সে ব্যাপারে মিলমালিকেরা উপায় খুঁজছেন।’
কৃষকেরা জানান, সমস্যা শুধু ছাই ফেলায় নয়। প্রতিটি মিলের সামনে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করায় পানিপ্রবাহের গতি কমে গেছে। অনেক সময় কচুরিপানা আটকে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় আশানুরূপ ফলন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সন্দীব কুমার সিংহ বলেন, ‘খালে ছাই ফেলা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছি।’