শৌচাগারে রোগীর ঝুলন্ত লাশ, চারজন বরখাস্ত

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শৌচাগার থেকে পুলিশ গতকাল শুক্রবার সকালে সামসুদ্দিন সওদাগর (৭৫) নামের এক রোগীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।
এ ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার জন্য হাসপাতালের চারজন কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত এবং ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সিভিল সার্জন শাহ আলম গতকালই হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সেবিকা (নার্স) নাসিমা খানম ও জ্যেষ্ঠ সেবক মো. রাশেদ, ওয়ার্ডবয় আওলাদ হোসেন ও মেথর (সুইপার) মায়া রানী জমাদারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছেন। এ ছাড়া বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (হাসপাতাল) তপন কুমার তপাদারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (শৃঙ্খলা) এমদাদুল হক ও ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ডায়রিয়াজনিত কারণে ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় সামছুদ্দিন সওদাগর হাসপাতালে ভর্তি হন। পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার তিনি নিখোঁজ হন। গতকাল সকাল নয়টার দিকে ওই ওয়ার্ডের শৌচাগারে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, পুরুষ ওয়ার্ডে চারটি শৌচাগার রয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্যবহারের অনুপযোগী। ওই শৌচাগারেই তাঁর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সেবিকা নাসিমা খানম বলেন, ‘১৯ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে সামছুদ্দিন সওদাগর ওয়ার্ডে নিজের শয্যায় ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসক দেওয়ান নুরুল ইসলাম ওই কক্ষে গিয়ে তাঁকে (সামছুদ্দিন) অনুপস্থিত পান। আমিও সেদিন ওই চিকিৎসকের সঙ্গে ছিলাম।’
পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিন-চারজন রোগী অভিযোগ করেন, কয়েক দিন ধরে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। বিষয়টি বারবার বলার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ প্রসঙ্গে সেবিকা নাসিমা খানম ও দুলালী রানী রায় বলেন, ‘দুর্গন্ধ ছড়ালেও কিসের গন্ধ এবং কোথা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে—আমরা বুঝতে পারিনি।’
সামছুদ্দিনের জামাতা নূরুল ইসলাম ও পরিবারের দু-তিনজন সদস্য বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাঁর খোঁজ পাওয়ার জন্য আমরা টেলিভিশনে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পাশাপাশি প্রচারপত্র বিলি করে আসছি। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও জানাই। এর পরও তাঁর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।’
তবে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক পপি আক্তার বলেন, ‘গতকাল সকালে পরিষ্কার করার সময় ঝাড়ুদার আবদুস সালাম শৌচাগার থেকে তীব্র গন্ধ বের হওয়ার বিষয়টি আমাকে জানান। সামছুদ্দিনের লাশ ঝুলতে দেখা যায়। এর পরই বিষয়টি সাটুরিয়া থানা-পুলিশকে জানানো হয়।’
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সামছুদ্দিন আত্মহত্যা করেছেন। কারণ শৌচাগারের ভেতর থেকে দরজা আটকানো ছিল। এর পরও মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর লাশ ময়নাতদন্ত করতে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনার পর হাসপাতালে গিয়ে আরএমও শাহরিয়ারকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ‘পরে কথা বলি’ বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।