আবাসন-সংকটে তিন কলেজের শিক্ষকেরা

সিলেটের তিনটি সরকারি কলেজের শিক্ষকেরা তীব্র আবাসন-সংকটে ভুগছেন। শিক্ষকদের জন্য নিজস্ব আবাসনব্যবস্থা না থাকায় তাঁদের বেতনের সিংহভাগই ব্যয় হচ্ছে বাসাভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে। এতে তাঁদের সচ্ছল জীবনযাপন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে একাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষক অভিযোগ করেছেন।

১৩ বছর ধরে অধ্যক্ষের বাসভবন পরিত্যক্ত: ১৯৬৪ সালে সিলেট সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নির্মাণ করা হয় অধ্যক্ষের বাসভবন। পরবর্তী সময়ে কোনো সংস্কারকাজ না করায় ২০০১ সালের ৬ জানুয়ারি ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এ কারণে ১৩ বছর ধরে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। ৩৩ জন শিক্ষকের বিপরীতে কলেজে ২৫ জন কর্মরত থাকলেও তাঁদের জন্য নেই কোনো আবাসনসুবিধা।

কলেজ অধ্যক্ষ আশফাক আহমদ বলেন, ‘অধ্যক্ষের বাসভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় সেখানে বসবাস করতে পারছি না। এটি সংস্কারের জন্য একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। এ ছাড়া শিক্ষকদের আবাসনসুবিধা নিশ্চিত করা গেলে খুবই ভালো হতো।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাসে শিক্ষকদের অনীহা: সিলেট এমসি কলেজে শিক্ষকদের আবাসনের জন্য একটি ভবন রয়েছে। তবে ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রং উঠে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে ভবনটি। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এ অবস্থায় শিক্ষকেরা এখানে বসবাস করতে আগ্রহ হারিয়েছেন। ১০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার পরিবারের আবাসনসুবিধা থাকলেও এখানে বসবাস করছে মাত্র দুটি পরিবার।

১৮৯২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক বছর পর শিক্ষকদের আবাসনের জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এরপর উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার না হওয়ায় শিক্ষকেরা এ ভবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন। কেবল অধ্যক্ষের বাসভবনটি ব্যবহারের উপযুক্ত থাকলেও উপাধ্যক্ষের জন্য নেই কোনো বাসভবন। এর বাইরে কলেজে ১৩৮টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১১৬ জন শিক্ষক। তাঁদের আবাসনের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।

কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ জানান, শিক্ষকদের আবাসনসমস্যা দূর করতে যে ভবনটি রয়েছে, সেটি সংস্কারের পাশাপাশি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

আবাসনসুবিধার বাইরে ৪৭ শিক্ষক: ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে বর্তমানে ৬৩ জন শিক্ষকের স্থলে কর্মরত রয়েছেন ৪৯ জন। এর মধ্যে কলেজ অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপার ছাড়া বাকি ৪৭ জন শিক্ষকই আবাসনসুবিধা পাচ্ছেন না। আবাসনসুবিধা নিশ্চিত করলে শিক্ষকদের জীবনযাপন কিছুটা হলেও সচ্ছল হবে বলে কয়েকজন শিক্ষক মন্তব্য করেছেন।

কলেজ অধ্যক্ষ মো. নজরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের বিষয়টি ভেবেই প্রতিটি কলেজে অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের আবাসনের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে। পাশাপাশি অপর শিক্ষকদের আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হলে অনেকটাই ভালো হতো বলে আমি মনে করি।’