জয়পুরহাটে হিমাগারে ডাকাতি ছররা গুলিতে আহত ছয়

হাসপাতালের মেঝেতে ডাকাতদের হামলায় গুরুতর আহত হিমাগারের নিরাপত্তাকর্মী মামুনুর রশীদ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
হাসপাতালের মেঝেতে ডাকাতদের হামলায় গুরুতর আহত হিমাগারের নিরাপত্তাকর্মী মামুনুর রশীদ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

জয়পুরহাটে একটি হিমাগারে গত শনিবার রাতে ডাকাতদের ছোড়া শটগানের ছররা গুলি ও হামলায় ছয়জন আহত হয়েছেন। একই রাতে ডাকাত-আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে কালাই উপজেলায় মাতাই ইউনিয়নের সাউথ পোল কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড নামের হিমাগারে। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রধারী ও মুখোশ পরা প্রায় ২০ জন ডাকাত প্রধান ফটকের নিরাপত্তাকর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হিমাগারের ভেতরে প্রবেশ করে। শ্রমিকেরা বাধা দিলে ডাকাতেরা শটগান থেকে গুলি ছোড়ে। এতে পাঁচজন আহত হন।
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) আবু কালাম সিদ্দিক গতকাল রোববার দুপুরে হিমাগার পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গুলির খোসা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা দেখে মনে হয়েছে শটগান থেকে এসব গুলি ছোড়া হয়েছে।
ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন হিমাগারের গুদামরক্ষক সিরাজুল ইসলাম, শাহ আলম, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি মোজাম্মেল হক, খণ্ডকালীন কর্মচারী আহেদুল ইসলাম, গুদামরক্ষক হাবিবুর রহমানের স্ত্রী ফারজানা বেগম। এ ছাড়া ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন নিরাপত্তাকর্মী মামুনুর রশীদ। তাঁদের সবাইকে প্রথমে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. তারেক রহমান গতকাল বলেন, অস্ত্রধারী ডাকাতেরা অফিসকক্ষের আলমারি ভেঙে ১০ লাখ ১৩ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
আহত সিরাজুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তাকর্মী মামুনুর রশীদকে কুপিয়ে ডাকাতেরা হিমাগারের ভেতরে প্রবেশ করে। ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারী তখন ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ নিরাপত্তাকর্মী আবদুল জলিল ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করেন। তিনি বলেন, ‘জলিলের ডাকে ঘুম ভাঙার পর লাঠি হাতে নিই। এরপর চোর ভেবে ডাকাতদের একজনকে কাছে পেয়ে পেটাতে থাকি। এ সময় ঊরুতে গুলি লাগে। গুলির শব্দে অন্য শ্রমিকেরা এগিয়ে এলে ডাকাতেরা নির্বিচারে গুলি করতে থাকে।’
আহত শাহ আলম বলেন, ডাকাতেরা সংখ্যায় ২০ থেকে ২৫ জন ছিল। তারা মুখোশধারী এবং হাতে ধারালো অস্ত্র ও বন্দুক ছিল। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রমজান আলী প্রথম আলোকে জানান, খবর পেয়েই পুলিশ হিমাগারে যায়। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তিনি বলেন, আলামত ও গুলির খোসা দেখে মনে হচ্ছে শটগান থেকে গুলি ছুড়েছে। লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় গুলিবিদ্ধ ফারজানা বেগমের সঙ্গে। তিনি গুদামরক্ষক হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। অন্তঃসত্ত্বা ফারজানার অভিযোগ, সকালে এই হাসপাতালে এলেও বেলা একটা পর্যন্ত কোনো চিকিৎসকই তাঁর খোঁজ নেননি। ফারজানাসহ ডাকাতির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের অভিযোগ, তাঁদের শরীর থেকে গুলি বের করার উদ্যোগ নেননি চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আবদুল মান্নান বলেন, আহত ছয়জন সকালে ভর্তি হওয়ার পরপরই চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তাঁদের এক্স-রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচার করা হবে।
রাতভর ডাকাত-আতঙ্ক: মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ডাকাত-আতঙ্কে গ্রামের পথে পথে পাহারা দিয়ে রাত কাটিয়েছেন গ্রামবাসী। গত শনিবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে ডাকাত হানা দিতে পারে আশঙ্কার কথা প্রচার করা হলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোথাও ডাকাত হানা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
রাজনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেওয়ান খায়রুল মজিদ সালেক বলেন, ডাকাত হানা দিতে পারে এমন খবর প্রশাসন থেকে জানানো হয়। এরপর জনসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকে ঘোষণা দিলে সবার মধ্যে হুলুস্থুল পড়ে যায়।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সতর্ক থাকার জন্য আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিষয়টি জানাই।’ তিনি বলেন, মানুষ দ্রুত সাড়া দিয়েছে। এটা ভালো দিক। অল্পসংখ্যক পুলিশের পক্ষে সবদিক দেখা সম্ভব হয় না।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছন বগুড়া; জয়পুরহাট ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি)}