শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে সব বাধা দূর করার অনুরোধ

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে সব ধরনের বাধা দূর করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার দুবাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ অনুরোধ জানান। তবে শ্রমবাজার খোলার ক্ষেত্রে ‘কিছু জটিলতা’ আছে উল্লেখ করে ইউএইর প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার কথা বলেছেন। 
বাংলাদেশ ও ইউএই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হককে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এ তথ্য জানিয়েছে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে আল মাকতুমের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর এবং ঢাকায় ইউএইর দূতাবাস নির্মাণের জন্য জমি হস্তান্তরের বিষয়ে তিনটি আলাদা চুক্তি সই হয়েছে। এর আগে গত রোববার বাংলাদেশ থেকে ইউএইতে নারী কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। নিরাপত্তা ও অধিকার সুনিশ্চিত করে দেশটির ১৪টি পেশায় প্রথম পর্যায়ে এক হাজার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করা হবে। পরে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
হাসিনা-মাকতুম শীর্ষ বৈঠক: গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুমের মধ্যে বৈঠকটি হয় দুবাইয়ের জাবিল প্রাসাদে। প্রায় এক ঘণ্টার এ জনশক্তি রপ্তানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করে।
বাসস জানায়, বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পররাষ্ট্রসচিব জানান, দুই নেতা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত দেড় শ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভওয়ে নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ইউএইর স্বাধীনতার পর দ্রুত উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ইউএইর প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। এ সময় ইউএইর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রমিকদের আন্তরিক ও কঠোর পরিশ্রমী অভিহিত করে বলেন, এ ক্ষেত্রে কিছু ‘জটিলতা’ রয়েছে, যা কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করা যেতে পারে।
শ্রমবাজার আবার বড় আকারে খোলার ব্যাপারে ইউএইর সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি না এলেও পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, শেখ হাসিনার এ সফরের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি আবার চালুর ব্যাপারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান উপস্থিত ছিলেন।
তিন চুক্তি: দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর তাঁদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর এবং ঢাকায় ইউএইর দূতাবাস নির্মাণের জন্য জমি হস্তান্তরের বিষয়ে তিনটি আলাদা চুক্তি সই হয়। প্রথম দুই চুক্তি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও ইউএইর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং অন্য চুক্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও ইউএইর পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সই করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর চুক্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, এ চুক্তির আওতায় উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে আসামি হস্তান্তর করতে পারবে। এটি একটি মানবিক চুক্তি, যাতে দুই দেশের উভয় দেশের স্বার্থই রক্ষিত হবে। নিরাপত্তাবিষয়ক চুক্তিটি করা হয়েছে সন্ত্রাসবাদ, অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচার রোধে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য। চুক্তি দুটি দুই দেশের মধ্যে আস্থার পরিবেশের উন্নতিতে সহায়ক হবে।
তিন দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাত ১২টা ১৫ মিনিটে দেশে ফেরেন।