ঐক্যবদ্ধ থাকলেই স্বপ্নের বাংলাদেশ: আনিসুজ্জামান

সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলেই সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ–খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য আনিসুজ্জামান এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করা হয়।

আয়োজকেরা জানান, ১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়। এর প্রতিবাদে সম–অধিকার, ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে জন্ম নেয় বাংলাদেশ হিন্দু–বৌদ্ধ–খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
আজ ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে বাংলা একাডেমিতে আসেন। তাঁরা এ সময় ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’ স্লোগান দেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলবেই’।
জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর মঙ্গলপ্রদীপ জ্বেলে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর শুরু হয় সম্মাননা পর্ব। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং ঐক্য পরিষদের সূচনা ও বিকাশে অবদান রেখেছেন এমন ১৫ জনকে এবার মরণোত্তর সংবধর্না দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন কবি সুফিয়া কামাল, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, বিচারপতি কে এম সোবহান, আইনজীবী সুধাংশু শেখর হালদার, টি. ডি রোজারিও, ভদন্ত বোধিপাল মহাথের, সাংবাদিক আহমেদুল কবির, বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, কে বি রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার সুধীর দাস, নির্মূল কুমার দে, অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন, ডানিয়েল কোরাইয়া এবং ভদন্ত সুমঙ্গল থেরো। এই ১৫ জনের পরিবার ও স্বজনদের হাতে সম্মাননা তুলে দিয়ে আলোচনা করতে এসে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা আবার সংযোজন করা হলেও রাষ্ট্রধর্ম রয়ে গেছে। এই দুটো কীভাবে একসঙ্গে থাকে, আমি বুঝি না।’

প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘দেশের অনেক জায়গায় কয়েক বছর ধরে সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। অনেক উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে। এসব ঘটনায় শারীরিক আঘাতের চেয়ে মানসিক আঘাত অনেক বেশি।’

আনিসুজ্জামান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা যদি সাম্প্রদায়িক নির্যাতন প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন, তাহলেই সেটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। নাগরিক সমাজেরও এ জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলেই মুক্তিযুদ্ধেও চেতনায় যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম সেটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সব ধরনের বৈষম্য, অপশাসন দূর করতেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেশ স্বাধীন করলেও আমাদের সত্যিকারের মুক্তি আসেনি। একদিকে সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা, আরেকদিকে আদর্শহীন সুবিধাবাদী রাজনীতি। ২৫ বছর ধরে আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমরা বলতে চাই, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমাদের ২৫ বছরে অনেক অর্জন আছে। কিন্তু আরও অনেক দূর যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিউবার্ট গোমেজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিমাই চন্দ্র ভৌমিক। তিনি ঐক্য পরিষদের গঠন, এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম ও সাংবাদিক আবুল মোমেন ছাড়াও ঐক্য পরিষদের নেতারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।