কুশিয়ারা নদীর তীব্র ভাঙন ঝুঁকিতে বসতি, বাজার

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম কুশিয়ারা নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে গ্রামের বেশকিছু বসতি ও বাজারের অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ৫ নম্বর কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর আখাখাজনা, লাউঝারি, আঙুরা মোহাম্মদপুর, আঙুরা, গোবিন্দ্রশ্রী, দেউলগ্রাম ও গড়বন্দ গ্রামের বসতিগুলো তীব্র নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে গ্রামগুলোর পাশের উত্তর আখাখাজনা বাজার এবং পারিরবাজার দুটির প্রায় অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

গ্রামের অনেকে জানান, সাতটি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুড়ারবাজার উচ্চবিদ্যালয়, পঞ্চখণ্ড বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং জামিয়া মাদানিয়া আঙুরা কওমি মাদ্রাসা ভবন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে ভাঙনে শতাধিক গাছপালা, দোকানপাট, কবরস্থান নদীতে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রবাহ সংঘের সহসভাপতি শিব্বির আহমদ জানান, চলতি বছর ভাঙন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে গ্রামবাসী কয়েক বছর ধরে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু আজ অবধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গ্রামগুলোতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে। এরই মধ্যে কুশিয়ারা নদী-তীরবর্তী কুড়ারবাজার ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকে বসতি ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছেন। পারিরবাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমদ বলেন, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে পারিরবাজারের কয়েকটি দোকান নদীতে হারিয়ে গেছে। পুরো বাজারটিই এখন ভাঙনের মুখে। এ অবস্থায় অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য স্থানান্তর করেছেন।

আখাখাজনা গ্রামের মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘নদীতে খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে দিনে-রাতে ড্রেজিং চলছে। এতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামগুলো বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলখাছ আলী বলেন, ‘নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। এটি গুরুত্বপূর্ণ জনসমস্যা হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।’

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি উপজেলায় নতুন যোগ দিয়েছি। শিগগিরই গ্রামগুলো পরিদর্শন করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এনামুল হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাঙনকবলিত গ্রামগুলোতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা পাঠানো হবে।’