দুর্ঘটনা-অবরোধে দীর্ঘ যানজট, ভোগান্তি

বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাড়বকুণ্ড এলাকায় গতকাল বিকেলে অবরোধ করেন পাটকল শ্রমিকেরা। এতে মহাসড়কের উভয় অংশে দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয় ষ ছবি: প্রথম আলো
বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাড়বকুণ্ড এলাকায় গতকাল বিকেলে অবরোধ করেন পাটকল শ্রমিকেরা। এতে মহাসড়কের উভয় অংশে দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয় ষ ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরুর আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত ভয়াবহ যানজট ছিল। আবার বেতন-বোনাসের দাবিতে একটি পাটকলের শ্রমিকদের অবরোধের কারণে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অংশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। ফলে এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
চট্টগ্রাম হাইওয়ে পুলিশ, যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে মেঘনা-গোমতী সেতুর গজারিয়া অংশে দুটি কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ভোর সাড়ে চারটার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত কাভার্ড ভ্যান দুটি সেতুর ওপর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এরই মধ্যে সেতুর দুই পাশে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের গজারিয়া থেকে চান্দিনা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট লেগেছিল।
গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মেঘনা সেতু এলাকায় যানজটে আটকা পড়েছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি ফেনীতে একটি দলীয় সভায় যোগ দিতে ঢাকা থেকে যাচ্ছিলেন। পরে হাইওয়ে ও থানার পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁকে যানজট এলাকা পার করে দেন।

দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়ে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে রোগী, শিশু, বৃদ্ধ ও নারী যাত্রী এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ-বোঝা নিয়ে বিপদে পড়েন পুরুষ যাত্রীরা। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা সৌদিয়া পরিবহনের যাত্রী খুলনা সদরের সাইয়ুল ইসলাম সেতু এলাকায় বলেন, ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে চান্দিনার গোমতায় যানজটে আটকা পড়েন তাঁরা। সেখান থেকে ২২ কিলোমিটার পথ আসতে চার ঘণ্টার বেশি লেগেছে। চালক মো. ইউনুস বলেন, যোগাযোগমন্ত্রী ৫ আগস্ট থেকে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে আবার তা প্রত্যাহার করায় মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তি হচ্ছে।

ঢাকাগামী কাভার্ড ভ্যানের চালক আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন চালক সাড়ে চার ঘণ্টা দীর্ঘ যানজট পার হয়ে আসার পর দাউদকান্দির আমিরাবাদে এসে প্রথম আলোকে বলেন, এত কষ্টের চেয়ে ঘোষণা অনুযায়ী ৫ আগস্ট থেকে ভারী যানবাহন বন্ধ রাখাই ভালো ছিল।

ঢাকা থেকে চান্দিনাগামী মাইক্রোবাসের যাত্রী চান্দিনার বীরখাল গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম, নোয়াখালীর সোনাপুরগামী বাসের যাত্রী নবাবপুর গ্রামের নাছরিন আক্তারসহ কয়েকজন জানান, ভোর পাঁচটায় গজারিয়ার ভাটেরচর এলাকায় যানজটে পড়েন তাঁরা। সেখান থেকে দাউদকান্দির গৌরীপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পথ আসতে তাঁদের চার ঘণ্টা ২৫ মিনিট লেগেছে। বাকি যানজট যেতে তাঁদের কত সময় লাগবে তা আল্লাহ জানেন।

গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাস বলেন, দুর্ঘটনার পরই দুর্ঘটনাকবলিত কাভার্ড ভ্যান দুটি সরিয়ে নিলেও সেতুর ওপর কিছু সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় যানজট দেখা দেয়। তা ছাড়া ঈদের আগে মহাসড়কে যানবাহনের চাপও কয়েক গুণ বেশি থাকায় ও এলোপাতাড়ি যানবাহন চলাচল করায় যানজট দীর্ঘ হয়।

দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভারী যানবাহন চলাচল, দুর্ঘটনা, বৃষ্টি ও গাড়ির চাপ বেশি থাকায় যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং ঘন ঘন যানজট দেখা দিচ্ছে।

সীতাকুণ্ডে শ্রমিক ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়বকুণ্ড এলাকার আনোয়ারা জুট মিলসের শ্রমিকদের এক সপ্তাহের বেতন-বোনাস ও ভবিষ্য তহবিলের টাকা সোমবার পরিশোধ করার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ পরে আরও এক দিন সময় নেয়। কিন্তু গতকাল বেলা তিনটায় পাটকলের ব্যবস্থাপকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে চলে গেলে বিক্ষুব্ধ প্রায় ৯০০ শ্রমিক বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে বিকেল চারটার দিকে সীতাকুণ্ড থানার সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ ইকবাল আলী, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামিউল আলম, স্থানীয় চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ কারখানায় গিয়ে সিবিএয়ের সভাপতি মো. শাহ আলম ও সম্পাদক নিজাম উদ্দীনকে নিয়ে কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক হাতেম আলী মণ্ডলের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক আজ বুধবার বোনাসের টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন।

সিবিএয়ের সভাপতি শাহ আলম বলেন, বেতন-বোনাস না দিয়ে গতকাল বেলা তিনটায় কর্তৃপক্ষ পালিয়ে চলে যায়। তাই শ্রমিকেরা মহাসড়কে নামতে বাধ্য হন। পাটকলের তাঁত অপারেটর মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘ঈদের আর দুই দিন বাকি। এখন বেতন-বোনাস না দিলে আর কখন ঈদের বাজার করব।’

পাটকলের উপমহাব্যবস্থাপক হাতেম আলী বলেন, শ্রমিকদের বেতন তেমন বাকি নেই। এবার বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। অর্থ সংকটের কারণে তা অর্ধেক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকেরা তা না মেনে মহাসড়ক অবরোধ করেন।