আরও সাহসী হওয়ার প্রত্যয়

প্রথম আলোর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান (ডান থেকে নবম) ও প্রথম আলো পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে প্রথম আলো পরিবারের সদস্যরা। সিএ ভবন মিলনায়তনে গতকাল এই আয়োজন করা হয় l ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলোর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান (ডান থেকে নবম) ও প্রথম আলো পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে প্রথম আলো পরিবারের সদস্যরা। সিএ ভবন মিলনায়তনে গতকাল এই আয়োজন করা হয় l ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোকে আরও আধুনিক, উজ্জ্বল, তারুণ্যনির্ভর ও সাহসী করার প্রত্যয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হলো ১৬ বছর পূর্তির উৎসব। এ উপলক্ষে এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানে মিলিত হন প্রথম আলো পরিবারের সব কর্মী। তাঁরা পত্রিকাটিকে আগামী পৃথিবীর উপযোগী করে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার অঙ্গীকার করেন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনের দশম তলার মিলনায়তনে আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান বলেন, প্রথম আলো সাহস করে তার নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে সত্য কথা বলতে পেরেছে বলেই আজ এই উচ্চতায় এসে পৌঁছেছে। তবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ববোধও বেড়েছে। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই কাজ করে যেতে হবে।
লতিফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশ। এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দেশে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপরে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে এটি ৭ থেকে ৮ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারত। তবু যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা কম নয়। মানুষের এই এগিয়ে যাওয়াকে অনুপ্রেরণা দিয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে গেলে প্রথম আলো ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন বলেন, প্রথম আলোর জন্মদিন ৪ নভেম্বর। কিন্তু এবার সে দিন পবিত্র আশুরা উপলক্ষে পত্রিকা বন্ধ থাকবে বলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানটি একটু এগিয়ে আনা হয়েছে। এরপর দুটো গান গেয়ে শোনান শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু।
প্রথম আলোর কর্মী এখন ৯৮০ জন। ঢাকায় তাঁদের প্রায় ৬০০ জনকে নিয়ে এই আয়োজন। প্রথম আলো অনলাইন, প্রথম আলো জবস, প্রথমা প্রকাশন, কিশোর আলো ও এবিসি রেডিওর কর্মীরাও এ আয়োজনে শরিক হন। প্রথম আলো এখন শুধু দেশের সেরা বাংলা পত্রিকাই নয়, ওয়েবপোর্টাল ধরলে সারা বিশ্বে বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। মূল পত্রিকার প্রচারসংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। রোজ এর পাঠকসংখ্যা অর্ধকোটির ওপর। অনলাইনে ২১০ দেশে পড়েন আরও ৩৫ লাখ পাঠক। এই সাফল্যের আনন্দ ভাগাভাগি করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের করণীয় নিয়েও খোলামেলা কথা হয় অনুষ্ঠানে।
ষোড়শ বর্ষপূর্তিতে প্রথম আলোর মূল ভাবনা ‘কালকের পৃথিবীটা আমাদের হবে’। এর ব্যাখ্যা করে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের স্পার্ক নিউজ ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম’ নামে ৪০ দেশের প্রধান ৪০টি পত্রিকার অংশগ্রহণে নিজ নিজ দেশের মানুষের উন্নয়ন, উদ্যোগ নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। তারা এতে বাংলা ভাষার পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলোকে আমন্ত্রণ জানায়। এ ছাড়া বাংলা পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলোই প্রথম দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে প্রথম আলোর সাপ্তাহিক উপসাগরীয় সংস্করণ কাতার থেকে ছাপা হচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষের অগ্রগতির সম্ভাবনাকে প্রেরণা দিয়ে আগামী দিনে পৃথিবীতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সহায়তা করতে চায় প্রথম আলো। সে কারণেই এবার বর্ষপূর্তির এই মূল প্রতিপাদ্য।
মূল ভাবনা নিয়ে পরিবেশিত হয় গান ‘স্বপ্ন একটাই, চলো একই সুরে গাই/ কালকের পৃথিবীটা আমাদের হবে’। গানের পরে দেখানো হয় প্রথম আলোর কর্মীদের অভিমত নিয়ে তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্র।
জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামও সাফল্যে দাম্ভিক না হয়ে বিনয়ের সঙ্গে, আরও বেশি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যেতে প্রথম আলোর কর্মীদের অনুপ্রেরণা দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন ক্ষয়িষ্ণু ও সৃজনশীল দুটি শক্তি রয়েছে। ক্ষয়িষ্ণু শক্তির প্রভাবে দেশে দুর্নীতি, অদক্ষতার প্রসার ঘটে। আবার সৃজনশীল শক্তি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় নতুন নতুন উদ্যোগ, উদ্ভাবনা, উৎপাদন ও মানবসম্পদের বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, ভবিষ্যতে ক্ষয়িষ্ণু শক্তির পরাজয় ঘটবে। বিজয়ী হবে সৃজনশীল শক্তি। আর প্রথম আলো এই শক্তিকে জয়ের পথে উদ্যম ও প্রেরণা জুগিয়ে যাবে।
প্রথম আলো পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের (এমসিসিআই) সভাপতি রোকিয়া আফজাল রহমান শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, প্রথম আলোতে খুব ভালো দলগত সমঝোতা ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ রয়েছে। দলগতভাবে কাজ করার এই পরিবেশই এর দ্রুত সাফল্য অর্জনের একটি প্রধান শক্তি।
পরিচালনা পর্ষদের অপর সদস্য ও এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন হোসেন বলেন, ‘প্রথম আলোর সাফল্য ব্যক্তিগতভাবে আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে। এখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখি। বিশেষ করে প্রতিটি বিভাগ এখানে যেভাবে কাজ করে, আমাদের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের আমরা সেই দৃষ্টান্ত দিয়ে অনুপ্রাণিত করি।’
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন পরামর্শক সম্পাদক কামাল আহমেদ ও হেড অব বিজনেস তানভীর আহমেদ। ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক সাইফুর রহমান, আতিকুর রহমান, ওবায়দুর রহমান ও আরশাদ ওয়ালিউর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের কাজের স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। সম্পাদক মতিউর রহমান তাঁর আলোচনায় বলেন, ‘সামনে অপার সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান বিশ্ব যেভাবে প্রতিনিয়ত জ্ঞান, প্রযুক্তি, চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। অপার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আমাদের আগামী দিনের পৃথিবীর উপযোগী হয়ে উঠতে হবে।’ তিনি প্রথম আলোর পরিচালনা পর্ষদ, দেশ-বিদেশের পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই আজ প্রথম আলো এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। এই সাফল্যের আনন্দ সবার।
সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করেন।