অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছেই

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কবি শাহেদ কায়েসকে হত্যার চেষ্টাকারীদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ বাড়ছে। সংক্ষুব্ধ লেখক-শিল্পী সমাজের পক্ষে ঈদের ছুটির মধ্যেও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদের পরদিন ঢাকা থেকে শতাধিক নবীন-প্রবীণ লেখক-শিল্পী যাচ্ছেন মায়াদ্বীপ ও নুনেরটেক এলাকার মানুষের সঙ্গে সংহতি জানাতে।

কবি শাহেদ কায়েস দীর্ঘদিন ধরে মায়াদ্বীপের জেলে শিশুদের শিক্ষা দিয়ে আসছেন এবং সেখানকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। এ জন্য বালু সন্ত্রাসীরা তাঁকে হুমকি দিয়ে আসছিল। গত ২৫ জুলাই তিনি মায়াদ্বীপ থেকে ফেরার পথে আক্রান্ত হন। আক্রমণকারীরা তাঁকে অপহরণের পর হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে সোনারগাঁয়ের পুলিশ মেঘনা থানার সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করে। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে আটক ওয়াসিম ছাড়া আসামিদের আর কাউকেই  গ্রেপ্তার করা হয়নি।

লেখক-শিল্পীদের মায়াদ্বীপ যাত্রা কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা লেখক-গবেষক ফিরোজ আহমেদ জানান, ‘মায়াদ্বীপে গিয়ে আমরা সেখানকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আসামিদের  গ্রেপ্তারের দাবি জানাব।’ তিনি বলেন, এটি শাহেদ কায়েস হত্যা চেষ্টাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আয়োজিত তাঁদের ধারাবাহিক কর্মসূচির একটি। এরপর ২৪ আগস্ট বিকেল চারটায় ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে। দেশের বাইরে নিউইয়র্কেও প্রবাসী কবি-লেখকেরা মানববন্ধন করে দূতাবাসের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যার যার অবস্থান থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছে। তবু আসামিদের ধরা হচ্ছে না। কারণ  বালু সন্ত্রাসীদের পেছনে রয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু লোক, যাদের নাম-ধাম গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক শ্রুতির নীতিনির্ধারণী সদস্য রণজিত কুমার বলেন, ‘রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসনের সরকারদলীয় সাংসদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও সরকারদলীয় নেতা সেলিনা ইসলাম মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বলে আমরা অভিযোগ করেছি। রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি ওয়াসিমকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে ফোনে তদবির করার অভিযোগ রয়েছে। সেলিনা ইসলাম বালু ব্যবসার নেপথ্য চালক বলে অভিযোগ আছে এবং শাহেদ কায়েসকে অপহরণের সময় ব্যবহূত স্পিডবোটটির মালিকও তিনি। স্পিডবোটের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি ওয়াসিম তাঁর ভাগনে। সুবিদ আলী ভূঁঁইয়া সেলিনা ইসলামসহ সব বালু ব্যবসায়ীর মদদদাতা।’

তবে প্রথম আলো ডটকমের পক্ষে মুজিবুল হক, সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও সেলিনা ইসলামের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তাঁরা তিনজনই এ অভিযোগ বানোয়াট বলে দাবি করেন।

মুজিবুল হক বলেন, ‘ওই ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া ছেলেটির দুজন আত্মীয় আমার কাছে আসেন। আমি তো জনপ্রতিনিধি, আমার কাছে লোকজন আসবেনই। ওই দুজনের অনুরোধে ঘটনাটি সম্পর্কে জানার জন্য আমি সোনারগাঁ থানার ওসিকে ফোন করেছিলাম। তবে ঘটনা শোনার পর আমি তাঁকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন প্রবাসী বাংলাদেশি। গত ২১ জুলাই কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেঘনা বালুমহাল ইজারা পেয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটি তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি আটক হওয়া স্পিডবোটটির মালিকানা তাঁর বলে স্বীকার করে বলেন, আটক ওয়াসিম তাঁর কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে এই স্পিডবোট চালান। তবে ওয়াসিম তাঁর ভাগনে নন বলে তিনি দাবি করেন।

সুবিদ আলী ভূঁঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সেলিনা ইসলাম নামে কাউকে চেনেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বেও আমার নাম যুক্ত করে এ জাতীয় প্রচারণা চালানো হয়েছে। যত দূর ধারণা করছি আমার নির্বাচনী এলাকার একেবারে প্রান্তবর্তী এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ওই এলাকার কোনো বালু ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। তবু আগেরবার এ বিষয়টি শোনার পর আমি কুমিল্লার জেলা প্রশাসনকে অবৈধ বালু তোলার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’

গতকাল বুধবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রুতি আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের পরিচালক ধীমান সাহা। অন্যান্যের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, সদস্যসচিব হালিম আজাদ, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।