শিশু পরিবারের ঈদ

শিশু পরিবারের ঈদ প্রস্তুতি
শিশু পরিবারের ঈদ প্রস্তুতি

এমনিতে তেমন একটা আবদার করার সুযোগ নেই। তবে ঈদ বলে কথা। তাই ‘চিকেন কাপড়ের’ জামা কেনার কথাটা ‘আম্মা’কে জানিয়ে দিয়েছিল ওরা। আম্মাও নিরাশ করেননি। বাজার থেকে রঙিন কাপড় কিনে এনেছেন। জামাও তৈরি। তেজগাঁওয়ের সরকারি শিশু পরিবারের ১৭৫ জন শিশু এখন চাঁদ ওঠার অপেক্ষায়।

যে শিশুদের ঈদ আয়োজনের কথা বলা হচ্ছে, তারা অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। এরা অনাথ। কারও মা-বাবা কেউই নেই, কারও বা শুধু মা আছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত শিশু পরিবারে ঠাঁই হয়েছে এদের। শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক ঝর্ণা জাহিনকে তারা ‘আম্মা’ বলে সম্বোধন করে। তাদের যত আবদার সব এই আম্মার কাছে।

শিশুরা জানিয়েছে, এবার ঈদে তারা দুটো করে জামা পেয়েছে। একটি শিশু পরিবারের পক্ষ থেকে, আর একটি পুরান ঢাকার একজন দানশীল ব্যক্তি শিশুদের জন্য পাঠিয়েছেন। এই ব্যক্তি প্রতি ঈদেই শিশুদের পোশাক পাঠান। তবে ঈদের জামা দেখতে চাইলে শিশুদের মধ্যে একটু অনীহা দেখা গেল। ঈদের জামা বলে কথা। আগে দেখে ফেললে পুরোনো হয়ে যাবে। তার পরও কেউ কেউ যত্ন করে ভাঁজ করে রাখা তাদের জামা দেখাল। শুধু যে জামা কেনা হয়েছে এ শিশুদের জন্য, তা কিন্তু নয়। জুতো কেনা হয়েছে, কেনা হয়েছে মাথার ক্লিপ, সাবান, নারকেল তেল, লিপস্টিক, শ্যাম্পু, টিপের পাতা, নেইল পলিশ, আর কাজলও। চাঁদরাতে হাতে লাগানোর মেহেদি তো আছেই। মীম, আন্নি, আয়েশাসহ সবাই ব্যস্ত ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে। 

শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিশু পরিবারের চারটি হাউসের শিশুদের মধ্যে ঈদের দিন চলে নানা প্রতিযোগিতা। কোন হাউস সবচেয়ে ভালো রান্না করলো, কারা ঘরদোর বেশি ভালো করে সাজাতে পারলো ইত্যাদি। এরপরও থাকে কিছু আলাদা চমক। অনেক চেষ্টা করেও শিশুদের কাছ থেকে সে চমকের কিছুই জানা গেল না। এই শিশুদের প্রত্যেকেই চায় প্রথম হতে।

২০০৯ সালে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক ঝর্ণা জাহিন এই শিশুদের সঙ্গেই ঈদ করছেন। শিশু পরিবারের ভেতরেই বাসা তাঁর। ঝর্ণা জাহিন ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন পাঁচ টাকার নোট সংগ্রহ করে রেখেছেন। ঈদের সকালে সব শিশু গিয়ে হাজির হবে ঝর্ণা জাহিনের বাড়ির দরজায়। তারপর চলবে সেলামি দেওয়া ও সেমাই খাওয়ার পালা।

আনন্দ নেই তানিয়া আক্তারের: ছোট্ট তানিয়া, পড়ছে মাত্র তৃতীয় শ্রেণীতে। কিন্তু এর মধ্যেই ওর শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। চিকিত্সাও চলছে। তবে এই শিশুর চিকিত্সার জন্য মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ মাত্র ৩০ টাকা। সরকারের বিভিন্ন তহবিল থেকে তার চিকিত্সার জন্য টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাজারো আনন্দের মধ্যেও তার মনে বিষাদ।