শিমুর সেই 'শক্তির বাক্স' চুরি গেছে

গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার সিমসন সাহার উদ্ভাবিত ‘মেকানিক্যাল পাওয়ার বক্স’টি চুরি হয়ে গেছে। ৪ আগস্ট রাতে এই ঘটনা ঘটে। উপজেলার নারকেলবাড়ি গ্রামে নিজের বাড়ির উঠানের পাশে পুকুরে একটি সেচযন্ত্রের সঙ্গে প্রদর্শনীর জন্য মেকানিক্যাল পাওয়ার বক্সটি সংযুক্ত ছিল । কে বা কারা সেটি খুলে নিয়ে যায়। জ্বালানি-সাশ্রয়ী এই পাওয়ার বক্সটি সেচযন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে দিলে যন্ত্রের ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

চুরির পরদিন ৫ আগস্ট কোটালীপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সিমসন সাহা। কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, এটি সাধারণ চুরি নাকি উদ্ভাবিত যন্ত্রটিকে প্রযুক্তিগত ব্যবহারের জন্য চুরি করা হয়েছে, পুলিশ তা জানতে মাঠে নেমেছে। সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। সারা দেশে বেতার বার্তা পাঠানো হয়েছে।

সিমসন সাহা তাঁর অভিযোগে বলেন, তাঁর আবিষ্কৃত মেকানিক্যাল ডিভাইসটি কোনো ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে চুরি করেছে। তাঁর উদ্দেশ্য প্রযুক্তিটি নিজের নামে নিয়ে ব্যবসা করা। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমি মামলা করতে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাকে জিডির পরামর্শ দিয়েছে।’

বিগত ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ে তিনি এই যন্ত্রের পেটেন্টের জন্য আবেদন করেন। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের ১৮ মাসের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এটির অনুমোদন দিয়ে থাকে মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই আবিষ্কারের স্বীকৃতি চাওয়ার এক বছর আগেই চুরি গেল যন্ত্রটি।

২০১০ সালের ২৬ জুন এ ব্যাপারে ‘প্রথম আলো’র প্রথম পাতায় ‘শিমুর শক্তির বাক্স’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তিনি জানান, ২০০৮ সালে তিনি এই পাওয়ার বক্সটি আবিষ্কার করেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার এনামুল হক প্রথম আলো ডটকমকে সিমসন সাহার আবেদনের (আবেদন নম্বর ২৫৩/১২) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু সিমসন সাহা ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আবেদন করেছেন। আর চুরির ঘটনা ঘটেছে চলতি বছর ৪ আগস্ট, সেহেতু অন্য কেউ এটা আবিষ্কারের কৃতিত্ব দাবি করতে পারবে না। 

মেকানিক্যাল পাওয়ার বক্স

১০ ইঞ্চি দীর্ঘ, ছয় ইঞ্চি চওড়া ও ১১ ইঞ্চি উচ্চতার একটি লোহার বাক্স। এর মধ্যে দুটি পেনিয়াম আছে। পেনিয়াম দুটিকে যুক্ত করেছে দুটো দণ্ড। পেনিয়ামগুলোর ‘দাঁতগুলো’ পরস্পর আবদ্ধ। একটি ঘুরলে অন্যটিও ঘোরে। বাক্সের বাইরে দুই পাশে দণ্ড। দণ্ডের সঙ্গে বাক্সেও সমান আকারের দুইটি চাকতি। প্রতিটি চাকতির সঙ্গে তিনটি করে লোহার দণ্ড। দুইটি দণ্ডের ওজন একই। একটি  সামান্য বেশি। এই হচ্ছে মেকানিক্যাল পাওয়ার বক্স। মূল ইঞ্জিনের সঙ্গে একটি বেল্টের সঙ্গে এটি যুক্ত করা হয়। মূল যন্ত্রটি যত শক্তি উত্পাদন করবে মেকানিক্যাল পাওয়ার বক্স তা দ্বিগুণ করবে।

সিমসন সাহা জানান, ১৬ অশ্বশক্তির একটি মোটর ব্যবহার করলে এক লিটার জ্বালানিতে এক ঘণ্টায় সাড়ে চার মণ ধান ভানা যায়। পাওয়ার বক্স জুড়ে দিলে চার অশ্বশক্তি আট অশ্বশক্তিতে পরিণত হয়। এতে করে একই সময়ে একই পরিমাণ জ্বালানিতে ধান ভানা যায় দ্বিগুণ। একইভাবে সেচযন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে দিলে একই ফলাফল পাওয়া যাবে।

সিমসন সাহা বলেন, ‘এটা আমার সারা জীবনের অর্জন। আমি এর মাধ্যমে কৃষিসংক্রান্ত যন্ত্র ছাড়াও পেটেন্ট অনুমোদনের পর আবারও গবেষণায় রত হব। যানবাহনের জ্বালানি সাশ্রয়ে গবেষণা করব। কিন্তু অভিযোগ করার পাঁচ দিন পরও পুলিশ আমার চুরি হওয়া যন্ত্রের কিনারা করতে না পারায় হতাশ হয়েছি।’