শোলাকিয়ায় সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত

দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। ছবি: সাইফুল হক মোল্লা, কিশোরগঞ্জ।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। ছবি: সাইফুল হক মোল্লা, কিশোরগঞ্জ।

স্মরণকালের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের সর্ববৃহত্ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। আজ শুক্রবার শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৮৬তম জামাতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

কাকডাকা ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজারো মুসল্লির ঢল নামে শোলাকিয়া ময়দানে। সকাল নয়টার আগেই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। সকাল ১০টায় নামাজ শুরু হলে শোলাকিয়া মাঠে উপচে পড়া ভিড়ের কারণে আশপাশের রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, নরসুন্দা নদীর পারে মুসল্লিরা নামাজের কাতার করে দাঁড়িয়ে যান।

শোলাকিয়ায় নামাজ আদায়ে কয়েক দিন ধরেই গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোরসহ ৬৪টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিশোরগঞ্জে লোক আসতে শুরু করে। অনেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাসায়, আবাসিক হোটেল, শহরের মসজিদগুলোতে এবং ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে রাত যাপন করেন। ভোররাতে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও হেঁটে হাজারো মানুষ কিশোরগঞ্জে আসেন। সবার গন্তব্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া।

বাংলাদেশ রেলওয়ে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল এক্সপ্রেস ট্রেন‘ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে ভোর ছয়টায় ছেড়ে সকাল আটটায় কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ স্টেশনে আসে। অন্যটি ভোর পৌনে ছয়টায় ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে সকাল সাড়ে আটটায় কিশোরগঞ্জে পৌঁছে। উভয় ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় আগত মুসল্লিদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

এবার জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ও কিশোরগঞ্জ শহর সাজিয়ে এক ব্যতিক্রমী ঈদ উত্সবের আমেজ সৃষ্টি করেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তোরণ নির্মাণ, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ও শহরের বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং শহরজুড়ে বিভিন্ন হাদিসসংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্রচারপত্র বিতরণ করে মুসল্লিদের শোলাকিয়া ঈদগাহে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

শোলাকিয়া ময়দানে এবার স্মরণকালের বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২১টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মাঠ ও আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ১১টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়।

রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে পরপর তিনবার শটগানের গুলি ছুড়ে মুসল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর সংকেত দেওয়া হয়।

মেলা

শোলাকিয়ায় বৃহত্ জামাতকে কেন্দ্র করে মাঠসংলগ্ন গরুর হাটে গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক বিশাল মেলা বসেছে।কাঠের তৈরি জিনিসপত্র, বিশাল লাঠি, মাটি, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র মেলায় স্থান পেয়েছে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটি সম্পাদক ইউএনও সুব্রত পাল বলেন, ‘মেলাটিও গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক বিশাল ভান্ডার হিসেবে আমাদের চলমান সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে।’