জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে

অবশেষে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে। আজ মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়টিতে অনুমোদন দিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন পাওয়া গেছে বলে আমিও শুনেছি। এখন আশা করা যায়, প্রকল্পের ১২ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী আবার বেতন–ভাতা পাওয়া শুরু করবেন। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়বে কি বাড়বে না, সে জটিলতায় পাঁচ মাস ধরে প্রকল্পে কর্মরতদের বেতন–ভাতা বন্ধ ছিল।’
ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিয়মিত কাজ হলেও তেমন সাফল্য না পাওয়ায় ২০০১ সাল থেকে জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
গত বছর আইনের সংশোধনীতে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস স্থাপনের কথা বলা হয়। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্যই ছিল রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস স্থাপন। রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসের কাছেই প্রকল্পের দায়িত্ব হস্তান্তর করার কথা ছিল। তবে চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এ অফিস স্থাপনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে গত বছরের আগস্টে স্থানীয় সরকার বিভাগ এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করে। মে মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে। তবে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) ১ম সংশোধিত’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভায় প্রকল্প এবং এ ধরনের অফিস স্থাপন ও রেজিস্ট্রার জেনারেল নিয়োগের বিষয়টির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত এসপিইসি সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেছিলেন, প্রকল্পটি এ সময়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এছাড়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়ায় তা নির্দিষ্ট প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এ প্রক্রিয়াটি ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা, উপজেলা এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের এটি রুটিন দায়িত্ব। তাই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ কার্যক্রম চলা এবং প্রকল্পের আওতায় জেনারেল অফিস স্থাপন বাহুল্য বলে প্রতীয়মান হয়।
অন্যদিকে সংশোধিত আইনেই বলা আছে, রেজিস্ট্রার জেনারেল অর্থ নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল। সরকার এ নিয়োগ দেবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারীও নিয়োগ দেবে। আইনের অধীন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, নিবন্ধক বা রেজিস্ট্রার জেনারেল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। আইনে জেনারেল অফিস স্থাপনের বাধ্যবাধকতা থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলতে থাকে। অবশেষে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন পাওয়া গেল।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস মূলত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে সমন্বয়ের কাজটি করবে। নিবন্ধনের জন্য যেসব সিস্টেম বা পদ্ধতি আছে তা দেখভাল করবে। সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের কাজটিও করবে এ অফিস। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থাকা এ অফিসটি আপিলসহ অন্যান্য আইনি জটিলতারও সমাধান করবে।
প্রকল্পের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার জন্ম নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। আজ বিকাল ছয়টা পর্যন্ত হিসাবে অনলাইনে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে ১২ কোটি ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৩। অনেকেই একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করেন। এ ছাড়া মৃত্যু নিবন্ধন সেভাবে না হওয়ায় জন্ম নিবন্ধন তালিকায় এ নামগুলো থেকেই যাচ্ছে। এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কাজটিও করবে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস।

১৬ টি সেবা পেতে লাগে জন্মসনদ
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী পাসপোর্ট পেতে, বিয়ে নিবন্ধনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে, সরকারি–বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নিয়োগ পেতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে, ভোটার তালিকা তৈরিতে এবং জমি নিবন্ধনে বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম সনদ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০০৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং দূতাবাসে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য পৃথক বিধিমালা জারি করা হয়। এ বিধিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খুলতে, আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স পেতে, গ্যাস, পানি, টেলিফোন এবং বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমতি, করদাতা শনাক্তকরণের নম্বর, ঠিকাদারি বা চুক্তির লাইসেন্স, ভবন নকশার অনুমোদন, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি, মোটর যানের নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন । অর্থাৎ আইন ও বিধি অনুযায়ী মোট ১৬টি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এ সনদ জরুরি।