বদলিতে ভুল ভোগান্তিতে ১৩৯ কলেজশিক্ষক

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলার প্রভাষক ফেরদৌস আলম পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন। তাঁকে বদলি করা হয়েছে শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া বদলির আদেশে তিনি দেখেন, একই কলেজে একই পদে আরেকজনকেও বদলি করা হয়েছে। ওই শিক্ষক ইতিমধ্যে যোগও দিয়েছেন।
ফলে ফেরদৌস আলমের ওই কলেজে থাকার সুযোগ নেই। তাই নতুন করে বদলি নিয়ে দুঃশ্চিন্তা তাঁর পদোন্নতির আনন্দ মাটি করে দিয়েছে। অন্য কলেজে বদলির জন্য তিনি ঢাকায় এসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাভবনে ছোটাছুটি করছেন। একই কলেজে একই পদে দুজনকে বদলি করার এমন ভুলে তাঁর মতো বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের ১৩৯ জন শিক্ষক এই ভোগান্তিতে পড়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কলেজ শাখা থেকে বদলিতে এই ভুলের তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ৮ নভেম্বর এক হাজার ৬৮৮ জন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপককে এবং এর কয়েক দিন আগে ৩৬৭ জন সহযোগী অধ্যাপককে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি পাওয়া এসব শিক্ষক এবং কাছাকাছি সময়ে আরও প্রায় ৮০০ শিক্ষকের বদলির সময় এই ভুল হয়। অন্যান্যবার ছোটখাটো ভুল হলেও এবার হয়েছে ব্যাপক। এ কারণে এ নিয়ে একদিকে শিক্ষকেরা পড়েছেন ভোগান্তিতে, অন্যদিকে শিক্ষা ক্যাডারে চলছে সমালোচনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে আগের চেয়ে এবার ভুল বেশি হয়েছে। শিক্ষকদের তথ্যগুলো থাকে মাউশিতে। সেসব তথ্য নিয়ে পদোন্নতি ও বদলির কাজটি করে মন্ত্রণালয়। এ কাজের জন্য একটি কমিটি আছে। হয়তো কমিটির কাছে সঠিক তথ্য না দেওয়ার কারণে এই ভুল হয়েছে। এই ভুলের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। এই ভুল সংশোধন করা হবে।’
মাউশির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কোন কলেজে কত পদ শূন্য সেই তথ্য দেন কলেজের অধ্যক্ষরা। তাঁরা ভুল তথ্য দেওয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে।
এই ভুলের শিকার অনেক শিক্ষককে গত কয়েক দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাভবনে (মাউশি) ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। তাঁদের কয়েকজন জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় এবং মাউশি নির্দেশ দিয়েছে ভুল বদলি করা পদেই প্রথমে তাঁদের যোগ দিতে হবে। পরে সংশোধন করা হবে। এতে সর্বশেষ কর্মস্থল থেকে দূরবর্তী জেলার কলেজে বদলি হওয়া শিক্ষকেরা পড়েছেন বেশি সমস্যায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের দুর্ভোগ বেশি।
টাঙ্গাইলের একটি কলেজের একজন নারী শিক্ষককে বদলি করা হয় নরসিংদীর একটি কলেজে। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলে। নরসিংদীর ওই কলেজে তাঁর আগেই যোগ দেন সেখানে বদলি করা অপর শিক্ষক। ফলে পদ না থাকলেও মন্ত্রণালয় ও মাউশির নির্দেশে তিনি নরসিংদীর ওই কলেজেই যোগ দিয়েছেন। এখন অপেক্ষায় আছেন নতুন করে বদলির। অথচ টাঙ্গাইলের অন্য এক কলেজেই তাঁর উপযোগী পদ রয়েছে।
ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, ভুল হয়েছে কয়েকজন কর্মকর্তার ‘অবহেলা বা ইচ্ছায়’। এর খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ শিক্ষকেরা।