মতভেদ ভুলে আইনজীবীদের ঐক্য গড়ার আহ্বান ড. কামালের

আইনজীবীদের রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে পেশাগত ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান ড. কামাল।

ড. কামাল হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক খুনের পরে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের আইনজীবীরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তা সারা দেশের আইনজীবীদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সাত খুন, মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

সংবিধানপ্রণেতা কামাল হোসেন আরও বলেন, সংবিধান সমুন্নত রাখা, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের ৬৭টি বারের ৪০ হাজার আইনজীবীকে রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে পেশাগত ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য তিনি শিগগিরই ঢাকায় আইনজীবীদের জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করবেন বলেও জানান।

আইনজীবী মাহবুবুর রহমান মাসুমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি সুব্রত চৌধুরি, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল বারী, সহসভাপতি আসাদুল্লাহ তারেক, হেলালউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খলিলুর রহমান, আহসানুল করিম চৌধুরী, রমজান আলী, এম এ ওহাব প্রমুখ।
সম্মেলনে হারুণ অর রশিদকে সভাপতি ও আওলাদ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার কমিটি গঠন করা হয়।
সম্মেলনে সুব্রত চৌধুরি বলেন, সাত খুনের ঘটনার পর ড. কামাল হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন, তাঁর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্টের দেওয়া আদেশে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। হাইকোর্ট ঘটনার তদন্তে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তদন্ত থেকে সিআইডিকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।

গুম-খুনের নগর নারায়ণগঞ্জে প্রশাসন বলতে কিছু নেই
আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সাত খুনের ঘটনার পরপরই ড. কামাল হোসেন নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। হত্যার সব তথ্যপ্রমাণ তদন্ত সংস্থা পেলেও ছয় মাস পরে এখন তদন্তে ঢিলেভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় কোনো এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এজাহারভূক্ত এক নম্বর আসামি নুর হোসেন ২ নম্বর আসামি ইয়াছিন মিয়াকে গত ছয় মাসেও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে খুনি র‌্যাবের ২২ সদস্য সাতজনকে অপহরণ–খুন করলেও রহস্যজনক কারণে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সাত খুনে জড়িত কয়েকজন র‌্যাব সদস্যকে এখনো চাকরিতে বহাল আছেন। সাত খুনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেওয়া র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যকে আসামি না করে সাক্ষী করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া র‌্যাব সদস্যরা ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাত খুনের চাঞ্চল্যকর বর্ণনা দিয়েছেন। প্রধান আসামি নুর হোসেনকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। নুর হোসেনের সঙ্গে গ্রেপ্তার তার সঙ্গী জামিন পেয়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরে এসেছেন। অপহরণ, গুম, খুনের নগর নারায়ণগঞ্জে প্রশাসন বলতে কিছু নেই। সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।