আরও সময় পেল আসামিপক্ষ

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শেষ করতে আরও এক বেলা সময় পেয়েছে আসামিপক্ষ। আজ মঙ্গলবার প্রথম সেশন তাঁরা যুক্তি দেওয়ার সুযোগ পাবেন। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল সোমবার আসামিপক্ষকে এ সময় বাড়িয়ে দেন। গতকাল ছিল যুক্তি উপস্থাপনে আসামিপক্ষের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার শেষ দিন। কিন্তু বিকেলে দিনের কার্যক্রমের শেষ দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক সময় বাড়ানোর আরজি জানান। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, মঙ্গলবার প্রথম সেশনের মধ্যে আসামিপক্ষকে যুক্তি দেওয়া শেষ করতে হবে। দ্বিতীয় সেশনে রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যুত্তর দেবে। ট্রাইব্যুনাল এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।

ট্রাইব্যুনাল যুক্তি উপস্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে তিন দিন ও আসামিপক্ষকে চার দিন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ চার দিনে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে। আসামিপক্ষ গতকাল নিয়ে পাঁচ দিন যুক্তি দিল।

আসামির কাঠগড়ায় সাকা চৌধুরীর উপস্থিতিতে গতকাল ঘটনার বিষয়ে যুক্তি দেন আহসানুল হক। তিনি বলেন, শোনা সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হতে হলে যে ব্যক্তির কাছ থেকে শোনা সে ব্যক্তিকে হাজির হতে হবে। অর্থাৎ যে ঘটনা বলেছে ও যে শুনেছে—উভয়কেই হাজির হতে হবে।

সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগের (মতিলাল চৌধুরীসহ ছয়জনকে হত্যা) বিষয়ে আহসানুল হক বলেন, এ ঘটনার একমাত্র সাক্ষী দেবব্রত সরকার ঘটনাটি দেখেননি, শুনেছেন সুনীলের কাছে। সুনীলকে বাকি ছয়জনের সঙ্গে গুডস হিলে (চট্টগ্রাম শহরে সাকা চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি) নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু পরে বয়স কম হওয়ায় তাঁকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেওয়া হয়। যে সুনীলের কাছ থেকে দেবব্রত ঘটনা শুনলেন, সেই সুনীল কোথায়? তাঁকে কেন রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হিসেবে হাজির করল না?

আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের তৃতীয় সাক্ষী সিরু বাঙালির সাক্ষ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই দুর্বল। তিনি বিশিষ্ট লেখক, ঐতিহাসিক, কিন্তু একাত্তরে কয়টি মুসলিম লীগ ছিল তা তিনি জানেন না। কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন কি না, তা-ও তাঁর জানা নেই। মৌলভি ফরিদ আহমেদকে নেজামী ইসলামের প্রধান বলেছেন, যিনি ছিলেন পিডিপির (পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি) ভাইস চেয়ারম্যান।

সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সপ্তম অভিযোগের (সতীশ চন্দ্র পালিত হত্যাকাণ্ড) বিষয়ে আহসানুল হক বলেন, এ অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ মাত্র একজন সাক্ষী সতীশের ছেলে পরিতোষ পালিতকে হাজির করেছে। পরিতোষ দাবি করেছেন, তিনি হত্যার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। কিন্তু জেরায় বলেছেন, একাত্তরে তিনি আসামিকে কখনো দেখেননি। এ ছাড়া তাঁর সাক্ষ্য সমর্থন করে অন্য কেউ সাক্ষ্য দেননি। বাড়ির পাশের যে ঝোপে লুকিয়ে তিনি ঘটনা দেখেছেন বলে দাবি করেছেন, তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সম্পর্কেও তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

গুডস হিল ছিল একটি নির্যাতনকেন্দ্র—রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, গুডস হিল নির্যাতনকেন্দ্র হলে সেখানে নির্যাতনের সরঞ্জামাদি থাকতে হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শেষে গুডস হিল তল্লাশি করে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গুডস হিলের আশপাশের বাসিন্দাদের রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী করেনি। গুডস হিল যদি সত্যিই নির্যাতনকেন্দ্র হতো, তাহলে প্রতিবেশীরা অবশ্যই বন্দীদের আহাজারি, কান্নাকাটি প্রভৃতি শুনতে পেতেন।

বিকেলে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করতে আহসানুল হক আরও সময়ের আরজি জানালে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সব সময় প্রথমে ঘটনার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়, পরে আইনগত বিষয়ে যুক্তি দিতে হয়। আপনারা প্রথম তিন-চার দিন বললেন আইনগত বিষয়ে, আজ (সোমবার) প্রথম ঘটনায় ঢুকলেন।