পথচারীদের সঙ্গে চালকদেরও শাস্তি

পদচারী সেতু ও পাতালপথ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করায় গতকাল বৃহস্পতিবার ১২৫ জনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আর উল্টো পথে যানবাহন চালানোর কারণে ১৩ চালককেও জরিমানা করেছেন আদালত। এ ছাড়া পদচারী সেতু থেকে অবৈধ দোকানও উচ্ছেদ করা হয়।
গতকাল আদালত চলাকলে বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় বেশিসংখ্যক পথচারীকে পদচারী সেতু ও পাতালপথ ব্যবহার করতে দেখা যায়। পদচারী সেতুতে ওঠার ও পাতালপথে ঢোকার মুখে পথচারীদের দীর্ঘ সারিতেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
সকালে ফার্মগেট এলাকার তিনটি সেতুর অবস্থা দেখতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত দোকান ও হকারদের উচ্ছেদ করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে ৩৮ জন হকারকে উচ্ছেদ করা হয়।
বিকেল চারটায় কারওয়ান বাজার সোনারগাঁও পুলিশ বক্সের সামনে বসেন আদালত। কারওয়ান বাজারে পথচারীদের পাশাপাশি উল্টো পথে ঢুকে পড়া গাড়ি, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলেরও জরিমানা করেন আদালত।
ভুলভাবে রাস্তা পার হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে আদালতে আনে পুলিশ। কিন্তু ততক্ষণে আদালতের সামনে আইন অমান্যকারীর সংখ্যা ২০ জন ছাড়িয়েছে। এ তিন বন্ধুর জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেতে ৩০ মিনিটের বেশি লেগে যায়।
এ সময় তাঁরা ক্ষিপ্ত হলে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে বলেন, ‘এদের হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলেন।’
তবে এই তিন বন্ধু ক্ষমা চাওয়ায় প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেন আদালত।
বিকেল পাঁচটার দিকে ফার্মগেটে আইন অম্যান্য করে রাস্তা পার হওয়ায় ১২ পথচারীকে প্রিজন ভ্যানে করে কারওয়ান বাজারের ভ্রাম্যমাণ আদালতে আনে পুলিশ। আদালত তাঁদের ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেন।
এ সময় এক তরুণ কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলেন। ডাকাডাকি করলেও তিনি শুনতে না পেলে পুলিশ তাঁর হাত ধরে আদালতে হাজির করেন। আদালত তাঁর হেডফোন জব্দ করার পাশাপাশি ২০০ টাকা জরিমানা করেন।
সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে এক তরুণীকে ধরে আদালতে আনা হয়। তরুণী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে একা আন্ডারপাসে ঢুকব, আপনি সেখানকার অবস্থা জানেন। আগে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।’ ওই তরুণীকে ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সকালে বাংলামোটরে ঢাকা মহানগর পুলিশ ট্রাফিকের যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, অভিযান শুরু হওয়ার আগে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। মুছে যাওয়া জেব্রা ক্রসিং আঁকাতে ও পদচারী সেতু পরিষ্কার করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা ব্যবস্থা নেয়নি।
আজ শুক্রবার ও আগামীকাল এ বিশেষ অভিযান বন্ধ থাকবে।
ফুটপাত নেই: গতকাল পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন নীতিমালায় পথচারীর অগ্রাধিকার বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে।
কিন্তু পথচারীদের সুবিধা, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী, শিশু, প্রবীণ, অসুস্থ ও মালামাল বহনকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বতর্মানে পুলিশের অভিযান পথচারীর অধিকার খর্ব করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের ৩৭ শতাংশ যাতায়াত হয় হেঁটে। হাঁটার নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত মানুষের মধ্যে পথচারীদের সংখ্যাই বেশি।
আরও বলা হয়েছে, রাস্তার দুই পাশে ব্যাংক, হাসপাতালের সামনে সম্পূর্ণ ফুটপাত দখল করে সারিবদ্ধভাবে গাড়ি রাখা হয়। সেই সঙ্গে ভাঙাচোরা ফুটপাত, মোটরসাইকেল পার্কিং, বিভিন্ন দোকানের ভ্যানসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় ফুটপাতে হাঁটারও পরিবেশ নেই।