জীবদ্দশায় ছেলেরা, এখন নাতিরা পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে

প্রয়াত মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে তাঁর সৃষ্ট রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। দলটির মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জাফরুল্লাহ খান। দলের আমির শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ গুরুতর অসুস্থ। তাঁরই ছোট ভাই আতাউল্লাহ এখন ভারপ্রাপ্ত আমির। এই আমিরেরই এক ছেলে হাবিবুল্লাহ মিয়াজী দলের মহাসচিব হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত আমির দলের কার্যনির্বাহী কমিটি ভেঙে দিয়ে ১১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন। একই সঙ্গে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের লক্ষ্যে আজ শনিবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচর জামিয়া নূরিয়া মাদ্রাসায় দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল (মজলিশে শুরা) অধিবেশন ডাকা হয়েছে।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠার পর একাধিকবার পারিবারিক কলহে জড়িয়ে আলোচনায় আসে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল খেলাফত আন্দোলন। হাফেজ্জী হুজুর বেঁচে থাকতেই পারিবারিক দ্বন্দ্বে দলটি কয়েকবার ভাঙে। তখন ওই দ্বন্দ্ব ছিল হুজুরের ছেলেদের মধ্যে। এবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন হুজুরের নাতিরা। দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।
খেলাফত আন্দোলনের নেতারা জানান, হাফেজ্জী হুজুরের মৃত্যুর পর খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্ব ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া নূরিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা নিয়ে দুই ছেলে আহমদুল্লাহ আশরাফ ও হামিদুল্লাহ এবং মেয়ের জামাই প্রয়াত ফজলুল হক আমিনী বিরোধে জড়ান। একপর্যায়ে আহমদুল্লাহ আশরাফ দলের আমির হন। একই সঙ্গে তিনি মাদ্রাসারও দায়িত্ব নেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পারিবারিক বিরোধের জেরে ফজলুল হক আমিনী মাদ্রাসা ছাড়েন এবং পৃথক দল গঠন করেন। অন্যদিকে হামিদুল্লাহও একপর্যায়ে পৃথক খেলাফত আন্দোলন গঠন করেন। তিনি মারা গেছেন। আর আহমদুল্লাহ আশরাফ এখন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে শারীরিকভাবে প্রায় অচল হয়ে পড়েছেন। এখন দল ও মাদ্রাসা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন তাঁর ছেলেরা অর্থাৎ হাফেজ্জী হুজুরের নাতিরা। আহমদুল্লাহ আশরাফের নয় ছেলে। দ্বিতীয় ছেলে হাবিবুল্লাহ মিয়াজী মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি দলেরও যুগ্ম মহাসচিব পদে ছিলেন, এখন মহাসচিব হতে চান। তাঁর অন্য ভাইয়েরা মাদ্রাসা পরিচালনায় অংশীদারত্ব চান। এর পেছনে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খানের ইন্ধন রয়েছে বলে সন্দেহ করেন মিয়াজী। এ অবস্থায় মিয়াজীর চাপেই জাফরুল্লাহ খান পদত্যাগ করেন বলে দলের নেতারা জানান।
জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বড় হুজুরের (দলের আমির শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ) ছেলেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তাঁদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিরসনের স্বার্থে কিছু শর্তসাপেক্ষে আমি পদত্যাগ করেছি।’
আর হাবিবুল্লাহ মিয়াজী দাবি করেন, জাফরুল্লাহ খান কর্মীদের চাপে পদত্যাগ করেছেন। কেন এই চাপ—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২৭ বছর মহাসচিব পদে থাকায় তাঁকে নিয়ে অনেক কথা জমে গেছে। তা ছাড়া তাঁর বয়সও হয়েছে, তিনি দুর্বলও হয়ে পড়েছেন।’
তবে হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর নয় ভাইয়ের একজন মুহিব্বুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও চাপে নয়। আমাদের পরিবার, মাদ্রাসা ও দল—সবার কল্যাণে জাফরুল্লাহ খান পদত্যাগ করেছেন।’
হাবিবুল্লাহ মিয়াজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসচিব হতে আমার আগ্রহ নেই। কিন্তু সবাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করছে।’ অবশ্য তিনি মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ভাইদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেন। তবে দল নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেন।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, হাবিবুল্লাহ মিয়াজী নয় ভাইয়ের একজনকে মাদ্রাসার উপপ্রধান, একজনকে শিক্ষাসচিব, আরেকজনকে হিফজুল কোরআন বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। বাকি থাকল খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্বের ভাগাভাগি।