নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করাই উদ্দেশ্য

বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস (বাঁয়ে)। মঞ্চে বসে আছেন মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রী ইলদেফনসো গুয়াহার্দো ভিয়াররেয়াল l ছবি: নাসির আলী মামুন
বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস (বাঁয়ে)। মঞ্চে বসে আছেন মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রী ইলদেফনসো গুয়াহার্দো ভিয়াররেয়াল l ছবি: নাসির আলী মামুন

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ একত্র হয়েছেন মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে। তাঁরা এসেছেন একে অন্যের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার আশা নিয়ে। ২৭ নভেম্বর এখানে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন। দিনটির সবচেয়ে বড় অর্জন এসেছে দিন শেষে। মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয় দিনটির শেষ পর্যায়ে মেক্সিকো সিটিকে সামাজিক ব্যবসা নগর হিসেবে ঘোষণা করে।
করপোরেট মহাকর্তার পাশাপাশি দুই দিনের এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন নবীন উদ্যোক্তারা। গবেষকের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা। দুই দিনে তাঁরা শুনলেন ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে পরস্পরের অভিজ্ঞতার কথা। সম্পর্ক তৈরি করলেন নিজেদের মধ্যে।
৫০টিরও বেশি দেশ থেকে ৭৫০ ব্যক্তি এ সম্মেলনে অংশ নিতে এসেছেন। ২৫ ও ২৬ নভেম্বর, সম্মেলন শুরুর আগের এই দুটো দিনও নবীন উদ্যোক্তারা বসেছিলেন প্রাক-সম্মেলন বৈঠকে।
সম্মেলন সূচনা করার কথা ছিল মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতোর। কিন্তু রাজধানীতে যে ছাত্র-অসন্তোষ চলছে, তাতে তিনি বিপাকে রয়েছেন। তাই সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি। তবে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।
সম্মেলনের সূচনা হয় সকাল সাড়ে নয়টায়। শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মেক্সিকোর জাতীয় উদ্যোক্তা ইনস্টিটিউটের সভাপতি এনরিকে হাকোব রোচা। এরপর মঞ্চে ওঠেন ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণার অগ্রদূত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তাঁর বক্তব্যে সম্মেলনের মূল সুরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এ সম্মেলন এক পারিবারিক পুনর্মিলনী। এখানে সবাই সবার কথা শুনবে। যে পিছিয়ে আছে, তাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। ফিরে যাওয়ার সময় সবাই শক্তি, বন্ধুত্ব ও কর্মক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে নিয়ে যাবে।
সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ ছিল এর মূল বক্তৃতাপর্ব। মূল বক্তৃতা দেন মুহাম্মদ ইউনূস ও মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রী ইলদেফনসো গুয়াহার্দো ভিয়াররেয়াল। মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় সামাজিক ব্যবসার ধারণা ব্যাখ্যা করে শোনান।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সাধারণ ব্যবসায় ভিত্তি ব্যক্তিগত স্বার্থ। সামাজিক ব্যবসায় তা নেই। এর উদ্দেশ্য অন্যদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করা। এ ব্যবসার ছকবাঁধা কোনো নিয়মও নেই। ব্যবসার প্রচলিত ধারণাগুলোকে তা বাদ দেয় না। তাই এর কোনো শত্রু নেই। ব্যবসায় নতুন নতুন ধারণা যুক্ত করতে পারাই বরং এর শক্তি। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত ব্যবসায় মুনাফা হয় নিজের। তাতে কত আনন্দ। সামাজিক ব্যবসায় মুনাফা হয় অন্যের। তাতে মহা আনন্দ।’ তিনি বাংলাদেশ, হাইতি, আলবেনিয়া ও কলম্বিয়ায় সামাজিক ব্যবসার বিভিন্ন সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন।
মুহাম্মদ ইউনূসের পরে বক্তৃতা দিতে ওঠেন ইলদেফনসো গুয়াহার্দো। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার নতুন নতুন ধারণা জরুরি। তবে তার চেয়ে বেশি জরুরি সেসবের সফল বাস্তবায়ন।’ সমাজের নিচের স্তর থেকে যখন এ সাফল্য আসতে শুরু করবে, তখন সারা পৃথিবী বদলে যাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। বক্তৃতার মাঝখানে তিনি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তা পড়ে শোনান।
প্যারাগুয়ের একটি তরুণ বাদকদল এরপর মঞ্চে ওঠে। তাদের সামাজিক ব্যবসার বিষয় বর্জ্য থেকে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা। বর্জ্য থেকে বানানো বাদ্যযন্ত্রে সুরমূর্ছনা তুলে আসর মাতিয়ে দেয়।
এরপর দিনজুড়ে খণ্ড খণ্ড অধিবেশনে চলে আলোচনা। তাতে সামাজিক ব্যবসার নানা স্তরে যুক্ত ব্যক্তিরা অংশ নেন।