লন্ডনে এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে তীব্র প্রতিবাদের মুখে বাংলাদেশ ছাড়ার পর এবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্টের (জিসিএম) প্রধান নির্বাহী গ্যারি এন লাই। গতকাল মঙ্গলবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যাওয়ার পথে তিনি বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে পড়েন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক এশিয়া এনার্জি বর্তমানে নাম বদলে জিসিএম রিসোর্সেস নামে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশের উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন চেষ্টার প্রতিবাদে গতকাল পশ্চিম লন্ডনের জিসিএম কার্যালয়ের বাইরে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশিরা এ বিক্ষোভ করেন। বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এ বিক্ষোভে ফুলবাড়ী সলিডারিটি গ্রুপ, বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠক ও পরিবেশবাদীরা অংশ নেন।

পশ্চিম লন্ডনের জিসিএমের কার্যালয়ে বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা এজিএম চলাকালে প্রতিবাদী স্লোগান দেন। বাইরে এমন বিক্ষোভের কারণে কোম্পানির কর্মকর্তারা শেয়ার হোল্ডারদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হন। একজন শেয়ার হোল্ডারের প্রশ্নের জবাবে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী গ্যারি লাই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোনো চুক্তির প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হন।
বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, নাম বদলে এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ীর কয়লা সম্পদ দখলে নতুন পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তারা বাংলাদেশ সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অনৈতিক চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা করছে। কোনো বৈধ চুক্তি না থাকলেও জিসিএম ফুলবাড়ী কয়লাখনির কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে লন্ডনে শেয়ার মার্কেট থেকে অর্থ উত্তোলন করে যাচ্ছে।

বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার আহ্বায়ক কাজী মোখলিছুর রহমান, সদস্যসচিব আক্তার সোবহান মাসরুর, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির যুক্তরাজ্য শাখার সম্পাদক ইসহাক কাজল, সোশালিস্ট পার্টির পিটার ম্যানস, ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্টের এপি জর্ডন, ইলিং ট্রেড ইউনিয়নিস্ট অ্যান্ড সোশ্যালিস্ট কোয়ালিশনের ক্রিস, ইউরোপিয়ান অ্যাকশন গ্রুপ অন ক্লাইমেট চেঞ্জের আনসার আহমদ উল্লাহ, ফুলবাড়ী সলিডারিটি গ্রুপের রুমান হাশেম প্রমুখ।

জিসিএমের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এ কোম্পানির কোনো কার্যক্রম নেই। ওয়েবসাইটে বলা আছে, বাংলাদেশের ফুলবাড়ীতে তারা ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লার সন্ধান পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তার এ কয়লা উত্তোলনের চেষ্টা চলছে।
লন্ডনের মূলধারার শেয়ারবাজারে জিসিএম নিবন্ধিত নয়। ২০০৪ সালের ১৯ এপ্রিল এটি এশিয়া এনার্জি পিএলসি নামে বিকল্প শেয়ারবাজারে (এআইএম) নিবন্ধিত হয়।
২০০৬ সালের​ ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জিবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভে তিনজন নিহত হন। এরপর নাম পরিবর্তন করে জিসিএম নামে কোম্পানিটি ফুলবাড়ীতে কয়লা উত্তোলনের চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ পর্যন্ত তাদের কোনো চুক্তি হয়নি। তবে ফুলবাড়ী কয়লাখনির কথা বলে এ কোম্পানি লন্ডনের শেয়ারবাজার থেকে প্রথম দফায় ১৪ মিলিয়ন পাউন্ড (১৬৯ কোটি ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭৭ টাকা) ও দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড (৩৯৮ কোটি ৮৮ লাখ ৩৯ হাজার ১১৭ টাকা) তুলে নেয়।