সাভার ও আশুলিয়ায় অবৈধ কাজে বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার

ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বৈধ অস্ত্র। সেই সঙ্গে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে জমি দখল, ঝুট ব্যবসা আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় গত ছয় বছরে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই উপজেলার অনেক সন্ত্রাসী অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছে। প্রায় প্রতিটি লাইসেন্সেরই সুপারিশকারী স্থানীয় সাংসদ কিংবা সরকারদলীয় নেতারা। সন্ত্রাসীরা নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এসব অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছে। কিন্তু এখন তারাই জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈধ অস্ত্রের দোহাই দিয়ে তারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারেরও সুযোগ পাচ্ছে।
তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে ঢাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন ১৮১ জন। এর মধ্যে সাভার থানা এলাকায় পিস্তলের লাইসেন্স পেয়েছেন ২৬ জন। রিভলবার পেয়েছেন একজন আর শটগানের লাইসেন্স পেয়েছেন ৮৩ জন। একই সময়ে আশুলিয়া থানা এলাকায় পিস্তলের লাইসেন্স পেয়েছেন ১৮ জন, রিভলবার দুইজন আর শটগানের লাইসেন্স পেয়েছেন ৪১ জন। ধামরাইয়ে পিস্তলের লাইসেন্স পেয়েছেন পাঁচজন আর শটগানের লাইসেন্স পেয়েছেন পাঁচজন।
অনুসন্ধানকালে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাইসেন্সপ্রাপ্তদের অনেকেই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।
আশুলিয়া থানার পুলিশ জানায়, আশুলিয়ার আরিয়ারার মোড় এলাকা থেকে ৫ ডিসেম্বর তিনটি শটগানসহ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের নজরুল ইসলাম (৫০) এবং একই জেলার কাশিয়ানীর সোলেমান মোল্লা (৫৫) ও বগুড়ার শাজাহানপুরের মসরু মিয়া (৫৬) নামে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে অস্ত্র তিনটি জব্দ করে তাঁদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। যদিও অস্ত্র তিনটি তাঁদের নামে লাইসেন্স করা বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আরিয়ারার মোড় এলাকায় প্রায় ৫০০ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে একই এলাকার আমিন মাতাব্বর আর ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা ইসমাইলের হয়ে ওই এলাকায় গিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর পাশাপাশি জমি দখলের চেষ্টা করেন।
এর আগে গত ৭ আগস্ট ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোন্তাজ উদিন একই এলাকার সুরুজ দেওয়ান নামে এক ঝুট ব্যবসায়ীর দুই পায়ে শটগান দিয়ে গুলি করেন। তাঁর নামে আশুলিয়া থানায় দায়ের করা একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর পরেও মোন্তাজ বছর খানেক আগে শটগানের লাইসেন্স পান।
মাস চারেক আগে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) ভেতরে একটি পোশাক কারখানা থেকে ঝুট ছিনতাই করতে গিয়ে শটগানসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যুবলীগের সাবেক নেতা সোহেল পারভেজ। ওই শটগানটিরও লাইসেন্স ছিল তাঁর নামে। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজনের কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকলেও তাঁরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
পুলিশ জানায়, শটগান ও পিস্তলের লাইসেন্স ছিল ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার নামেও। ভবনধসের পর গ্রেপ্তার হলে পুলিশ তাঁর দেওয়া তথ্যমতে একটি অবৈধ পিস্তল উদ্ধার করে। যা তিনি (সোহেল রানা) ব্যবহার করতেন। এ ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার ধামরাই থানায় অস্ত্র আইনে মামলাও হয়েছে।
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অস্ত্রের লাইসেন্স আছে এমন অনেকে মাদকব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। এদের অনেকে নানা অভিযোগে একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহী কিংবা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত নন, এমন নাগরিকেরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স পরিশোধ করলে অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য। এর পরেও মন্ত্রী বা সাংসদদের সুপারিশের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।