মুমিনুলের বিশ্বকাপও মায়ের জন্য

ছুটি পেয়ে কক্সবাজারে মায়ের কাছে ছুটে আসেন ক্রিকেটার মুমিনুল হক। ছবিটি ১৮ ডিসেম্বর তোলা l প্রথম আলো
ছুটি পেয়ে কক্সবাজারে মায়ের কাছে ছুটে আসেন ক্রিকেটার মুমিনুল হক। ছবিটি ১৮ ডিসেম্বর তোলা l প্রথম আলো

বাড়িতে খুশির রোশনাই। উৎসবের আমেজ। পিঠাপুলির ম-ম গন্ধ। রান্নাবান্নায়ও শাহি খাবারের তোড়জোড়। পাড়ার লোকজনও ভিড় করছে বাড়িটিতে। এত কিছুর আয়োজন বাড়ির ছোট ছেলেটিকে ঘিরে। তিনি ক্রিকেটার মুমিনুল হক। ১৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের বৈদ্যেরঘোনার বাড়িতে এলে তাঁকে ঘিরে তৈরি হয় এই উৎসবের আবহ।
বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে তিন দিনের ছুটি পেয়েছিলেন মুমিনুলরা। ছুটি পেয়েই বিমানে উড়ে ঢাকা থেকে ছুটে এলেন কক্সবাজারে মায়ের কাছে। আসার পর থেকে গলা জড়িয়ে ছিলেন মা মালেকা জয়নাবের। এক মুহূর্তের জন্যও মায়ের পাশ ছাড়েননি। অসুস্থ মায়ের চোখেও খেলা করছিল অন্য রকম দ্যুতি। চোখে–মুখে বুকের ধনকে কাছের পাওয়ার তৃপ্তি।
১৮ ডিসেম্বর সকালে শহরের বৈদ্যেরঘোনার বাড়িতে দেখা হয় মুমিনুলের সঙ্গে। বসার ঘরে মায়ের পাশে বসা তিনি। মুমিনুল বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে বসছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। বিশ্বকাপে এই প্রথমবারের মতো পা রাখছি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্যাম্প। হাতে সময় খুব কম। তাই তিন দিনের ছুটিতে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করতে ছুটে এলাম।’ মুমিনুল জানান, প্রাথমিক দলে ডাক পেলেও চূড়ান্ত দলে স্থান পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ বোর্ড ও নির্বাচকদের ওপর নির্ভর করছে।
মুমিনুল খেলেন মায়ের জন্য—এ কথা তুলতেই মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘আমার বিশ্বকাপও মায়ের জন্য। তবে দেশ সবার আগে। বাংলাদেশে জন্ম না নিলে আমি কখনো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেতাম না। তাই বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেলে প্রতিটি ম্যাচে দলকে জেতাতে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেব।’
জিম্বাবুয়ে সফরের কারণে দীর্ঘদিন পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়নি। আর বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলে ব্যস্ত সময়সূচির কারণে ২০১৫ সালের জুনের আগে কক্সবাজারে আসার সুযোগ হবে না।
মুমিনুল বলেন, ‘বেশ ভালো সময় কাটিয়েছি। ঘরে পরিবার–পরিজনের সেঙ্গ দেখা করার পাশাপাশি সবাই মিলে শীতের পিঠা খেয়েছি। সব সময় মায়ের পাশে ছিলাম। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর মা শয্যাশায়ী ছিলেন অনেক দিন। এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া, মা যেন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেন।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামের শেষ টেস্টে করা শতকটি একমাত্র ছোট বোন মুমুকে উপহার দিয়েছিলেন মুমিনুল। শতক উপহার পাওয়ার পর পরীক্ষার কারণে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি মুমু। এই সুযোগে কক্সবাজারের বাসায় দেখা হয় ভাইয়ার সঙ্গে। মুমুর আশা, এবারের বিশ্বকাপে তাঁর ভাইয়া দেশের ১৬ কোটি মানুষকে শতক উপহার দিতে পারবেন।
আনন্দের ক্ষণ যেন দ্রুত ফুরায়। ২৪ ঘণ্টা কীভাবে যে কেটে গেল টেরই পেলেন না মুমিনুল। ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার উদ্দেশে যখন মুমিনুল বাড়ি থেকে রওনা দেন, তখন মায়ের চোখে জল। এলাকার লোকজন তাঁকে খানিকটা পথ এগিয়ে দিলে।
মুমিনুলের বাবা নাজমুল হক বলেন, ‘বিশ্বকাপ আসরে সে অবশ্যই ভালো করবে। বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে তার পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে মায়ের দোয়া আর ভালোবাসা।’