হিন্দু হোন, নয় ভারত ছাড়ুন

ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের এক নেতা ভারতে বসবাসকারী তথাকথিত বাংলাদেশিদের ভারত ছেড়ে যেতে, নয়তো হিন্দু হয়ে যেতে বলেছেন। এই হুংকারের পাশাপাশি আরেক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ঘোষণা দিয়েছে, আগামী মাসে তারা চার হাজার মুসলিমকে হিন্দু ধর্মে ‘ফিরিয়ে আনবে’। 
এই হুংকার নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ফেলে দিয়েছে এক অদ্ভুত সংকটের মুখে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর এ সিদ্ধান্তে ভারতের শিল্পমহল শঙ্কিত। তারা মনে করছে, এর ফলে সরকারের উন্নয়নের কর্মসূচিগুলো পিছিয়ে পড়বে। মাথাচাড়া দেবে উগ্র হিন্দুয়ানা। বাধা পাবে দেশের উন্নয়ন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
গত মঙ্গলবার বজরং দলের মিরাট শাখার আহ্বায়ক বলরাজ দুঙ্গার বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি হলো বাংলাদেশিরা ভারত ছেড়ে যাক। কারণ, ওরা আমাদের সম্পদ নষ্ট করছে। তবে কেউ যদি ভারতে থাকতেই চায় তবে তাদের হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হতে হবে।’
দুঙ্গারের দাবি, ৪৩ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখন তাদের ফিরে যেতে হবে।’
সংঘ পরিবারের বিভিন্ন সংগঠন ইদানীং ‘ঘর ওয়াপসি’ (ঘরে ফেরা) নামে এক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। অন্য ধর্মের মানুষকে ধর্মান্তরের মাধ্যমে হিন্দু করে তোলাই এই কর্মসূচির একমাত্র লক্ষ্য। এ কর্মসূচি প্রসঙ্গে দুঙ্গার বলেন, ‘এ উদ্যোগ আগের ইউপিএ সরকারের সময় থেকেই শুরু হয়েছে। এটি চলছে, চলবে।’ দুঙ্গারের কথা, ‘বাংলাদেশিরা হিন্দু হয়ে গেলেও তাদের বৈধতা দেওয়া যাবে না। কারণ, এর ফলে তারা আমাদের জনসংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করবে।’
দুঙ্গার বলেন, ‘সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। তাদের সবাইকেই ভারতে ত্যাগ করতে হবে।’
দুঙ্গারের এই হুংকারের সময় গত মঙ্গলবারই ভিএইচপি নেতা সাবেক বিজেপি সাংসদ রাম বিলাস বেদান্তি বলেন, আগামী মাসে তাঁরা ‘ঘর ওয়াপসি’ কর্মসূচির আওতায় অযোধ্যায় চার হাজার মুসলিমকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনবেন।
যেসব পরিবারকে ধর্মান্তরিত করা হবে তাদের পরিচয় দিতে অবশ্য অস্বীকার করেন বেদান্তি। কারণ, ধর্মান্তরিত করার খবর শুনলে প্রশাসন তাতে বাগড়া দিতে পারে। তবে তিনি জানান, যাঁরা ধর্মান্তরিত হবেন তাঁদের বেশির ভাগই ফৈজাবাদ, আম্বেদকর নগর, গোন্ড এলাকার বাসিন্দা।
বেদান্তির এ ঘোষণা নিয়ে ফৈজাবাদ জেলা পুলিশের ডিআইজি সঞ্জয় কাক্কার বলেন, যারা এ ধরনের কথা বলে তারা এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে চায়। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভারতের শিল্পমহল এ ঘটনাপ্রবাহকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের আর্থিক বিকাশের জন্য যেভাবে এগোতে চাইছেন, তাতে এ কর্মসূচিগুলো বাধা হয়ে দাঁড়াবে। দেশের প্রধান বণিক সভা ‘ফিকি’র সভাপতি জ্যোৎস্না সুরি বলেছেন, ‘এ ধরনের কাজকর্ম অবাঞ্ছিত। নিশ্চিতভাবেই এ কর্মসূচি সরকারের লক্ষ্যচ্যুতি ঘটাবে। উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করবে।’ তিনি বলেন, সরকারকে অবশ্যই এ অস্বস্তি দূর করতে হবে।
ধর্মান্তরকে কেন্দ্র করে সংসদের অচলাবস্থাতেও শিল্পমহল চিন্তিত। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার ব্যাহত হচ্ছে। বণিকসভা সিআইআইয়ের সভাপতি অজয় শ্রীরাম মনে করেন, ‘সংসদ কাজ না করতে পারলে দেশেরই ক্ষতি।’ এইচডিএফসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান দীপক পারেখ বলেছেন, ‘আমরা গণতন্ত্র চাই, অকর্মণ্য গণতন্ত্র নয়। এ ধরনের কাজ দেশের উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
সংঘ পরিবার কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তে অটল এবং নরেন্দ্র মোদিও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আদর্শের সঙ্গে সুশাসনের এ বিরোধের মোকাবিলা কীভাবে করবেন এখনো তার কোনো ইঙ্গিত তিনি দেননি। এ পরিস্থিতিতে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা ৩০ জানুয়ারি ‘শৌর্য দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই দিন মহাত্মা গান্ধী নিহত হয়েছিলেন। সংগঠনের নেতা কমলেশ তিওয়ারি জানিয়েছেন, ‘২০টি শহরে এ দিনটি উদ্যাপিত হবে। মানুষের জানা উচিত, নাথুরাম গডসে নিজের স্বার্থের জন্য গান্ধীকে হত্যা করেননি।’
১৯ কথিত বাংলাদেশির কারাদণ্ড: ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের তিরুপতির একটি আদালত অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন কথিত বাংলাদেশিকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এদের প্রত্যেককে ৫০ টাকা করে জরিমানা হয়েছে। গত আগস্ট মাসে নারী ও শিশুসহ ৩১ বাংলাদেশিকে অন্ধ্রের চিত্তর জেলার রেনিগুনতা রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের দাবি, পাসপোর্ট ছাড়া তারা ভ্রমণ করছিল। পাসপোর্ট না থাকার দায়ে উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের পুলিশও গত মঙ্গলবার কথিত চার বাংলাদেশি নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। গত অক্টোবর মাস থেকে তারা ভারতে আছে বলে পুলিশের দাবি।