নলকূপের জিমতে চাতাল নির্মাণ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিহরপুর বল্লাপাড়া এলাকায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের জায়গায় এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মিল-চাতাল নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই এলাকার ৫০০ একর জমিতে সেচ দেওয়ার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বিএমডিএ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএমডিএর পুরোনো-২৯ নম্বর গভীর নলকূপের অধিগ্রহণ করা জায়গায় নাজমুল হাসান নামে হরিহরপুর গ্রামের এক ব্যবসায়ী ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালকলের চাতাল নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিনি নলকূপের নালা ভেঙে সে জায়গায় চাতাল ও নলকূপের পাইপলাইনের ওপর গুদাম ঘর নির্মাণ করছেন।
নাজমুল হাসান জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘জমিটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি। চাতালের কাজ শুরুর পর এলাকার কিছু বখাটে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় এমন অভিযোগ করছে। তা ছাড়া নলকূপ ঘিরে মিল-চাতাল নির্মাণ করলেও নলকূপ ব্যবহারে কৃষকের কোনো সমস্যা হবে না।’
ওই এলাকার বর্গা কৃষক মো. বাবলু বলেন, ওই নলকূপের পানিতে সেচ দিয়ে এলাকার প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ জন কৃষক সারা বছর ফসল চাষাবাদ করেন। নলকূপের জায়গায় মিল-চাতাল তৈরির কাজ শুরু করার পর থেকে নলকূপটি বন্ধ রয়েছে। সেচ দিতে না পেরে কৃষকেরা এখন বিপাকে পড়েছেন।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৬১-৬২ সালের দিকে তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বল্লাপাড়া এলাকায় দুই একর ৫৫ শতক জমি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণ করে। ওই নলকূপের জায়গা দখল করে চাতাল নির্মাণ করার অভিযোগ পেয়ে তিনি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাতালের মালিককে প্রথম তাগিদপত্র দেন। এরপর আবার অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে তাঁকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় তাগিদপত্র দিয়ে সরকারি অধিগ্রহণ করা জায়গায় চাতাল নির্মাণ বন্ধ করে তা ছেড়ে দিতে বলা হয়। সে সময় নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখলেও তিনি আবার চাতালের কাজ শুরু করেন। ঘটনাটি জানিয়ে গত ৬ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিএমডিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও দেওয়া হয়।
মো. রফিকুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক জানান, ওই গভীর নলকূপের ওপর ভরসা করে এলাকার প্রায় ৫০০ একর জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদ করা হয়। নলকূপের জায়গায় চাতাল তৈরির কাজ শেষ হলে কৃষকেরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। চাতাল তৈরির প্রতিবাদ করায় ওই ব্যবসায়ী তাঁদের নামে মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মেহেদী হাসান বলেন, বিএমডিএর একটি অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষের কাগজপত্র যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুর রহমান ২৯ নম্বর গভীর নলকূপের জমি পাউবোর মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি করে বলেন, ‘ওই এলাকার কৃষি ও কৃষকের জন্য নলকূপের জায়গা দখলমুক্ত করা প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’