পরিত্যক্ত ঘরে পাঠদান

সাজেকের দুর্গম ছয়নালছড়া সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ঘরে পাঠদান করছেন শিক্ষকl প্রথম আলো
সাজেকের দুর্গম ছয়নালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ঘরে পাঠদান করছেন শিক্ষকl প্রথম আলো

ভাঙা বেড়া। দরজা-জানালা নেই। মরচেধরে ক্ষয়ে যাওয়া টিনের চালায় ছিদ্র। নড়বড়ে হয়ে পড়েছে খুঁটি। জোরে বাতাস হলেই দুলে কক্ষ। দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষকেরাও। এর মধ্যেই চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকের ছয়নালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঘরটি এমনই বেহাল।
ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্রও আহ্বান করা হয়। নিয়োগ দেওয়া ঠিকাদার, কিন্তু কার্যাদেশ দেওয়ার পাঁচ মাস পরও ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।
অভিভাবকেরা জানান, গত তিন মাস আগে থেকে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও এখনো বিদ্যালয়ের জায়গা দেখতে কেউ আসেননি। বর্তমান বিদ্যালয়ঘরটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় ও উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্র জানায়, ছয়নালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জরারজীর্ণ হয়ে পড়ায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই এলাকায় সরাসরি কোনো সড়কপথ নেই। ফলে নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যালয়টি কাঠ দিয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। গত এপ্রিল মাসে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় (এলজিইডি) দরপত্র আহ্বান করে। এতে মেসার্স হোসেন এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। গত ৩০ জুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। বিদ্যালয় নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৮০০ টাকা। পরে দরপত্র মূল্য আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৭৮ জন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে আসবাব বলতে ১০ থেকে ১২ জোড়া বেঞ্চ, একটি টেবিল ও একটি চেয়ার। নথিপত্র রাখার কোনো আলমিরা পর্যন্ত নেই। শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট কোনো পোশাকও নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা নীল রতন চাকমা ও তনয় জ্যোতি চাকমা বলেন, অনেক অভিভাবক ভয়ে তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে বন্ধ করে দিয়েছেন। আট-দশটি পরিবার মিলে একজন গৃহশিক্ষক রেখে দিয়েছেন।

বিদ্যালয় ভবন  l প্রথম আলো
বিদ্যালয় ভবন l প্রথম আলো

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহল লাল চাকমা বলেন, ‘আমরা ঠিকাদার মো. শাহরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি বিদ্যালয় নির্মাণের জায়গা সংকুলান না হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি এখনো পর্যন্ত একবারের জন্যও ছয়নালছড়ায় আসেননি। তিনি যদি কাজ শুরু করেন তাহলে গ্রামবাসী সহযোগিতা করবেন।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্পণা চাকমা বলেন, ঠিকাদার ছয় মাস আগে একবার মুঠোফোনে কথা বলেছেন। এরপর আর যোগাযোগ করেননি। যেকোনো সময় পরিত্যক্ত ঘরটি ভেঙে পড়তে পারে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হোসেন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি শুনেছি যেখানে বিদ্যালয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। মাটি কেটে সমান করা না হলে নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে না। দরপত্রে মাটি কাটার কোনো বরাদ্দ নেই।’উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হক বলেন, গত ৩০ জুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকবার নোটিশও দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারকে আবার নোটিশ দেওয়া হবে।